রোজা এলেই পেঁয়াজ নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। এই সংকট নানা কারণে হয়। তবে স্বস্তির কথা হল, এবার রোজায় পেঁয়াজ কিনতে বেশ স্বস্তি পাবেন ভোক্তারা। গেল দুই বছর ধরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হচ্ছে দেশে। ভোক্তারাও কিনতে পারছেন কম দামে। কয়েক দিনের ব্যবধানে ১২ শতাংশ কমে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। সামনেও সহসা দাম বাড়বে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজ নিয়ে সংকট নিয়মিত ঘটনা। বছর তিনেক আগে রোজার মাসে সংকট দেখিয়ে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পণ্যটির দাম উঠে যায় ২০০-৩০০ টাকার ওপরে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গেল দুই বছরে দেশে চাষিরা পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়িয়েছে বিস্ময়কর হারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ টন। গত বছর উৎপাদিত হয়েছে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২ লাখ ৭৯ হাজার টন বেশি। চলতি বছরও পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়তে পারে আরও এক লাখ টন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মজিবর রহমান গণমাধ্যমকে বলছেন, গত বছর আমাদের ৩৬ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল। এবার হলো ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। এবার রোজায় পড়েছে পেঁয়াজের পুরো মওসুমে। তাই পেঁয়াজের ঘাটতি হওয়ার কোনো শংকা নেই।
বাজারে এ মুহূর্তে মুড়িকাটা পেঁয়াজ মিলছে দেদার। কিছু দিন পরই মওসুম শুরু হবে হালি পেঁয়াজের। পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে ভারতীয় পেঁয়াজের আধিপত্য কমায় স্বস্তি ফিরেছে বাজারে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো। বাংলাদেশি পেঁয়াজের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ কম টানে। ভারতীয় পেঁয়াজের আমাদের দরকার নেই। স্বাদেও দেশী পেঁয়াজের তুলনা নেই।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে বাজার কারসাজির দৌরাত্ম্য কমবে। গত কয়েক বছরে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট।
ক্যাবের বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, যখন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে তখন সাথে সাথেই আমাদের দেশে দাম বেড়ে যায়। আমাদের দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা যদি ভালো থাকত, তাহলে এই ভয়টা মানুষের মনে থাকত না। ব্যবসায়ীরাও এই ভয় দেখিয়ে সুযোগ নিয়ে পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারত না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সারা বছর বাজার স্থিতিশীল রাখতে অবকাঠামোর উন্নয়নের দিকেও সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। এটা করা গেলে নিত্যপণ্যটি নিয়ে কারসাজি সহজেই বন্ধ করা যেতো।