বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে গেছে! কি খুচরা, কি পাইকারি— কোথাও চিনি নেই। ক্রেতারা দোকানে গিয়ে খুঁজছেন, উচ্চমূল্যেও তারা চিনি কিনতে পারছেন না। প্যাকেট চিনি তো নেই-ই, খোলা চিনি যদিও কিছু মিলছে, তার জন্য কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা!
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো অনেকে এসেছেন এখানে বাজার করতে। কাঁচা বাজার শেষে যখন তারা চিনি কিনতে গেছেন, বহু দোকানে গিয়েও তারা কিনতে পারেননি চিনি। কথা হয় এমন কয়েকজনের সাথে। চিনির দাম বৃদ্ধির কথা আগে থেকে জানেন কিনা— এমন প্রশ্নে তারা বলেন, সরকার নির্ধারিত দাম ১০৯ টাকাই জানি, এরপর দাম বেড়েছে কিনা তারা জানেন না।
বাজারের শাহ মিরান জেনারেল স্টোর, লক্ষীপুর স্টোর, রতন স্টোর, আশা জেনারেল স্টোর নামের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেল, কোনো দোকানেই চিনি নেই। এই প্রতিবেদক দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেন, ক্রেতারা এসে চিনি চাচ্ছেন, কিন্তু না পেয়ে তারা ফিরে যাচ্ছেন।
চিনির বিষয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় শাহ মিরান জেনারেল স্টোরের এক দোকানির সাথে। তিনি জানালেন, পর্যাপ্ত চিনি সরবরাহ নেই। কেন সরবরাহ নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোম্পানির প্রতিনিধি যারা আছে তারাই ভাল বলতে পারবেন। তাদের সাথে কথা বলুন।
লক্ষ্মীপুর স্টোরে চিনি আছে কিনা, জানতে চাইলে দোকানি জানালেন, চিনি নেই। কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তা-ও তিনি বলতে পারলেন না। তিনি শুধু বললেন, কোম্পানি আর সরকার বলতে পারবে কবে চিনি আসবে।
দেশের বাজারে তিন দিনের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। আমদানিকারকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির রেকর্ড দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও।
বাজারে দাম স্বাভাবিক রাখতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়েছে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা। শুল্কছাড়ের পর গত ৬ এপ্রিল ৩ টাকা কমিয়ে খোলা চিনির কেজি ১০৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যায়নি। আর খোলা চিনি মিললেও ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে দেখা গেছে, এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি।
চিনির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মফিজুল হকের সাথে। তিনি দাবি করলেন, চিনির দাম বাড়ার পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। এক. গত পাঁচ-ছয় মাস আগে গ্যাসের সংকটে চিনি উৎপাদনে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, এখনও এর প্রভাব কাটেনি।
দুই. আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামে অনেক বেড়ে গেছে।
তিন. ভারত বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ। তবে দেশটিতে এবার আখের ফলন কম হওয়ায় তারা চিনি রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।
চিনির মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ নিয়ে রিফাইন্ড সুগার আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমানের সাথে দুপুর সাড়ে বারটার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।