জুলাই ২, ২০২৩, ১০:৩১ পিএম
সরকার নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনেই এক নির্দেশে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আওতাধীন সব অধিদপ্তর, সংস্হা ও প্রতিষ্ঠানকে ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণ, জলযান, মোটরযান ও আকাশযান ক্রয় ও ব্যবহার বাবদ বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখতে বলেছে।
একইসাথে সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ রাখতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কৃচ্ছতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী বাবদ বরাদ্দ ব্যবহারেও।
তবে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালন ও পরিপালনের স্বার্থে ১০ বছরের পুরনো গাড়ী মেরামত ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমতি নিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা যাবে বলে নির্দেশে বলা হয়েছে।
নতুন অর্থবছর ২০২৩-২৪ এর প্রথম কার্যদিবস (রবিবার, ২ জুলাই) অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ থেকে জারীকৃত এ সার্কূলারে স্বাক্ষর করেন উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান।
জারীকৃত ঐ পরিপত্রে বলা হয় চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্হার প্রেক্ষাপটে সরকারী ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধনের লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সরকার এসব সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।
এদিকে, এর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো সরকার অর্থবছরের প্রথমদিন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে এমন বিধিনিষেধ দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাক্তিত্বের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
সরকারের ব্যয় সংকোচনের এ উদ্যোগকে নজিরবিহীন আখ্যায়িত করে অর্থনীতিবিদ, কুটনীতিক, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন সরকার তার উচ্চাভিলাসী বাজেটের অর্থসংস্থান করতে না পারার বাস্তবভিত্তিক ধারনা থেকে আগেভাগেই ইকোনোমাইজ করা বা সতর্কভাবে খরচের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কারন সরকারকে বাজেটের অর্থ সংস্হানে ব্যাংক থেকে, বিদেশ থেকে ঋণ করতে হয়। তাই হয়তো আগেভাগেই একটা ব্যবস্হা নেয়া হচ্ছে।
ঢালাওভাবে এমন সিদ্ধান্ত সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সফলতা পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী। তিনি বলেন, গোড়ায় যে গলদ তা বন্ধ করতে কঠোর তদারকিমূলক ব্যবস্হা নিতে হবে। তা না হলে অন্যখানে ফাঁক খুঁজে অনিয়ম করা হবে। কতগুলো বিশেষ খাতে ব্যয় বন্ধ করা হলো কিন্ত অনেক খাত তো উন্মুক্ত রয়েই গেছে। কারন যারা অনিয়ম করে অভ্যস্ত তারা যেদিকে ব্যয়ের খাত উন্মূক্ত পাবে সেদিকটাতেই অনিয়ম দূর্নীতি করবে।
মোস্তফা কে মুজেরী বলেন প্রকল্প গ্রহনে যথেষ্ট যাচাই বাছাই ও পরিপক্কতার অভাব রয়েই গেছে। যে কারনে সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। এটি আমাদের কি ধারনা দেয়? তিনি বলেন, অপরিকল্পিত ও ফুলানো ফাঁপানো ব্যয়ের খাতগুলো চিন্হিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আমি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সরকার সাহস করে রাজনীতির বা নির্বাচনের বছরেও অর্থনৈতিক বিজ্ঞতাবশত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমি সমর্থন করি। তবে সাথে সাথে এও বলতে চাই আমি যে এটি যেনো কথার কথা না হয়। দৃঢ়তার সাথে এর বাস্তবায়নও দরকার। অতীতে এমন অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে কিন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
দ্বীতিয়ত, উন্নয়ন খাতের যে কথা বলা হয়েছে তা কাটছাট করতে গেলে প্রুনিং (যাচাই-বাছাই) করতে হয়। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক দিয়ে কমিটি করে এ প্রুনিং করে নিতে হবে যাতে করে প্রকল্পের জন্য চাওয়া অর্থ প্রকৃত অর্থে কাজে লাগে।
ড. ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, অপরিহার্য নয় এমন ব্যয় এখন করা উচিত নয়।