আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। মঙ্গলবার (১৮ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
এডিপির আকার বাড়ছে
ঘোষিথ এডিপির মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাক টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এডিপির এই আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ২০ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেশি। এছাড়া সংশোধিত এডিপির তুলনায় ২৭ হাজার ৬৮১ কোটি ১৪ লাখ টাকা বেশি। তবে স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৪৬৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সব কিছু মিলিয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যেসব প্রকল্প জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেসব প্রকল্পে সবোর্চ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাজেটে গবেষণার জন্য আলাদা রাখার নির্দেশও দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শুধু বরাদ্দ রাখলেই হবে না, সেই অর্থ যাতে ব্যয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার মতো গবেষণা করবে, আর কৃষি মন্ত্রণালয় তার মতো গবেষণা করবে। সব মন্ত্রণালয় তাদের মতো করে গবেষণা করবে। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্য
এডিপি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৭ ডলারে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সময় এমন একটি সংবাদ আমাদের জন্য আনন্দের।’
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাতের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাত হচ্ছে, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এছাড়া অন্যান্য খাতের মধ্যে শিক্ষা খাতে ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ৮ হাজার ৫২৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৬৩৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি মন্ত্রণালয়
স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৮ হাজার ৪১ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৩ হাজার কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ৮১২ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ২২ কোটি টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্প
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, চতুর্থ পিইডিপি কর্মসূচি, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এবং ঢাকা বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প।
এডিপিতে এবার বরাদ্দসহ প্রকল্প সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৫১৫টি। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে ১ হাজার ৩৯৬টি প্রকল্প, নতুন অনুমোদিত প্রকল্প ৩০টি এবং স্বায়স্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ৮৯টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলো বরাদ্দসহ অন্তভুক্ত করা হয়েছে।
বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৫৯৬টি, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির জন্য অন্তর্ভূক্ত প্রকল্প ১৪১টি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বেও প্রকল্প ৮৮টি এবং শেষ করার জন্য নির্ধারিত প্রকল্প হচ্ছে ৩৫৬টি প্রকল্প।