চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৬০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৫৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। যা গত পুরো অর্থবছরের চেয়েও বেশি। এর আগে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের সদ্য বিদায়ী মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ মার্কিন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি ২০২০ সালের মার্চে আসা রেমিট্যান্সের চেয়ে ৬৪ কোটি ৩ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের মার্চে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১২৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ১৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার ও জানুয়ারি মাসে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মার্চ) প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৬০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) একই সময়ের তুলনায় ৩৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রথমবারের মতো ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে রেমিট্যান্সের রেকর্ড। এরপর আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কমে, পরিমাণ ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। এরপর গত অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ডিসেম্বরে ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
নতুন বছরের শুরুতে অবশ্য রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলারি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সবশেষ মার্চে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।
অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দেশে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
পঞ্জিকা বছরের হিসাবে রেমিট্যান্স
সদ্য বিদায়ী ২০২০ সালে করোনার মধ্যেও প্রবাসীরা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার ও ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো— সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।