‘করোনার প্রভাব : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ৮, ২০২১, ১১:১৫ পিএম

‘করোনার প্রভাব : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন’

কোভিড -১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সম্পর্কিত প্রভাবগুলোর তুলনায় অনেক গভীরভাবে পড়েছে। আয়ের হ্রাস এবং ব্যয়ের থেকে সমাজে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি। বিপুল সংখ্যক পরিবার ঋণের জালে পড়েছে এবং তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছে। আসন্ন জাতীয় বাজেটে, সুস্পষ্ট আর্থিক বরাদ্দ (সামাজিক সুরক্ষা নেট কর্মসূচির অধীনে এবং এর বাইরে) করতে হবে এবং একটি নতুন ‘সামাজিক সংহতি তহবিল’ তৈরি করে কর্পোরেট এবং বেসরকারী অনুদানের জন্য আর্থিক উৎসাহ (সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এবং বাস্তব সময়ের সাথে) ডিজিটাল রিপোর্টিং) বিবেচনা করা যেতে পারে।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ জুড়ে প্রায় ১৬০০ খানায় একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল, যেখানে দশটি প্রান্তিক গোষ্ঠীর মুখোমুখি সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত মার্চ ২০২০ এর তুলনায় ফেব্রুয়ারি ২০২১ এ প্রান্তিক গোষ্ঠীর আয় ১৫.৮ শতাংশ ও ব্যয় ৮.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই পরিবারগুলোর প্রায় ৭৮.৮ শতাংশ অতিমারির ফলে আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল যার ৭৮.৫ শতাংশই পুনরুদ্ধার হয়নি। সমীক্ষা করা পরিবারের প্রায় ৬০.৮ শতাংশ পরিবারকে বিকল্প পন্থা হিসেবে ঋণ নিতে হয়েছিল এবং সেটি পরিশোধ করতে তাদের গড়পড়তা প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে।

এই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয় কীভাবে অতিমারিকে মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী: একটি খানা জরিপের শীর্ষক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে। মিডিয়া ব্রিফিংটি বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়।

এই গবেষণার জ্যৈষ্ঠ গবেষক, জনাব ইশতিয়াক বারি মুল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন যে, জরিপের জন্য অন্তর্ভুক্ত দশটি প্রান্তিক গ্রুপের মধ্যে, ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী, বস্তিবাসী ও চরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে। তাদের বাড়তি ব্যয় ও ঋণ পরিশোধে সহয়তা দরকার। সরকারীভাবে নগদ আর্থিক সহয়তা দিয়ে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের বর্তমান কোভিড -১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে সাহায্য করা উচিৎ।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-র আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রান্তিক মানুষের ওপর অতিমারির ফলে যে প্রভাব পরেছে তা সংঘঠিত জাতীয় প্রভাবের চেয়ে বেশি। প্রথাগতভাবে যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না তারাও এখন যুক্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯-এর অভিঘাত বহুমাত্রিকভাবে এসেছে যার প্রভাব কর্মসংস্থান, আয়, সঞ্চয় ছাড়াও পুষ্টিহীনতা, সহিংসতা এবং শিক্ষাখাতে ঝরে পরার ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয়। স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি ও উন্নয়ন সংস্থাদের একত্রিত করে একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া দরকার। 

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের বর্তমান করোনা বিষয়ক গবেষণা ও প্রচার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই  মিডিয়া ব্রিফিংটি আয়োজন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে - জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী - ইউএনডিপি, বাংলাদেশ; অ্যাকশন-এইড বাংলাদেশ; কানাডা ফান্ড ফর লোকাল ইনিশিয়েটিভস; সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি); ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ; ইকো কোওপারেশন; প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশ। 

মিডিয়া ব্রিফিং-এ সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং সিপিডি’স সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান বক্তব্য প্রদান করেন।

Link copied!