‘বাজেট এখন অনাথ; আইএমএফ তার পালক পিতা’

বিশেষ প্রতিবেদক

মে ১৬, ২০২৩, ০১:১৬ এএম

‘বাজেট এখন অনাথ; আইএমএফ তার পালক পিতা’

‘বাজেট তো এখন অনাথ হয়ে গেছে। আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) তার পালক পিতা হয়েছে।’ - এমন মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সিপিডি'র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

সোমবার (১৫ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘আইএমএফের সময়কালে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে’ শীর্ষক এ সংলাপে বিভিন্ন সেক্টর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ছাড়াও যোগ দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সিপিডির ট্রাস্টি সুলতানা কামাল।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী যদি বিরক্ত না হন, বাজেট নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমি কিছুদিন আগে বলেছিলাম বাজেট তো এখন অনাথ হয়ে গেছে। আইএমএফ তার পালক পিতা হয়েছে। সেই হিসেবে আইএমএফ-এর কর্মসূচিটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় এবং ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি এসে গেছে। সরকার এখন আইএমএফ-এর শর্ত পূরণ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আইএমএফ যখনই কোনো দেশে ঋণ কর্মসূচি নিয়ে যায়, তখন সেই দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর একধরনের কর্তৃত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করে।’

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে আইএমএফ যখন কোনো দেশে কর্মসূচি নিয়ে যায় তখন অনেক সময় সে দেশে বৈষম্য বেড়ে যায়। তারা যেসব শর্ত দেয়, তার কারণেই এটি হয়। এমনকি আইএমএফের নিজস্ব গবেষণায় এটা উঠে এসেছে।

আইএমএফ শর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে ভর্তুকি হ্রাস। ভর্তুকি অনেক সময় ভালো হয়, আবার খারাপও হয়। বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে, তা দিয়ে সার ও ডিজেলের মতো খাতেও ভর্তুকি বাড়ানো সম্ভব। বাড়তি কর আদায়ের কথাও বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু কাদের কাছ থেকে সেই কর আদায় করা হবে, সেটাই বড় কথা। এ ছাড়া দেশে কর আদায়ের আদর্শ ব্যবস্থা নেই। দেশের অনেক মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে বিপুল সম্পদ লাভ করছেন। সেখান থেকে কর আদায় করা যেতে পারে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে আগে থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। এখন আইএমএফের শর্ত পরিপালনে প্রয়োজনীয় খাতে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হলে এ বৈষম্য আরও বেড়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কর্মসূচি নিয়ে সবাই অবগত নয়। এটা কীভাবে কাজ করছে আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি চাহিদামতো চালের সরবরাহ নেই। অনেক চালের বস্তা ওজনে কম, মুখ খোলা। চালের মান ভালো না। পরিমাণে দেওয়া হয় কম। গরিব মানুষের সংযোগ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘু উর্দু ভাষাভাষী মানুষ দেশে বসবাস করেন। এসব মানুষসহ অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের জন্য বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।

সুলতানা কামাল তাঁর বক্তব্যে দেশের আদিবাসী ও সংখালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রয়োজনের কথা জাতীয় বাজেটে প্রতিফলনের দাবি করেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সুপিডি'র বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

Link copied!