আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
হিজাব পরতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার জেরে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
তারা বরখাস্ত শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারকে পুনর্বহাল, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ‘অপপ্রচারকারীদের’ শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের সই করা এক নোটিসে মঙ্গলবার ফজিলাতুন নাহারকে বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়।
নোটিসে বলা হয়, স্কুলের বসুন্ধরা প্রভাতি শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অ্যাডহক কমিটির (অস্থায়ী কমিটি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তাকে কেন চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, তার কারণ সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয় নোটিসে।
ফজিলাতুন নাহার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন।
তার পক্ষে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা বুধবার সকালে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
আন্দোলনরত নবম শ্রেণির একজন ছাত্রী বলে, “আমাদের আপা হিজাব পরতে নিষেধ করেননি, তিনি সঠিকভাবে হিজাব পরতে বলেছিলেন। প্যানেল শিক্ষার্থী যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন, তারা শেষ পিরিয়ডে ওই ক্লাসে গেলে আপা তাদের বলেছিলেন, বাইরে গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। প্যানেল ছাত্রীরা ড্রেসকোড না মানা ছাত্রীদের বাইরে নিয়ে ৮-১০ মিনিট কথা বলেন।
“এ ১০ মিনিটের জন্য আমাদের শিক্ষককের নামে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমরা আপার পুনর্বহাল, অপপ্রচারকারীদের শাস্তি চাই।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
দশম শেণির একজন ছাত্রী বলে, “আমাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তিনি ছাত্রীদের ড্রেসকোড মানতে বলেছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।”
এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্রী আনিসা করিম বলেন, “আমি ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। শুধু নাহার আপা নয়, অন্য শিক্ষকরাও কখনো আমাদের হিজাব নিয়ে কোনো কথা বলেননি। আমার বিশ্বাস, আপার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছে, সেগুলো ভিত্তিহীন।
“আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই, গণমাধ্যমসহ যারা আপার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে তার মানহানী করার চেষ্টা করছেন, তদের বিচার চাই।”
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই ফজিলাতুন নাহার বলেন, “আমি এই কাজটা করিই নাই। আর এই ক্লাসে ২২ জন মেয়ে হিজাব পরে না। নয়জন বা ১১ জন পরে। আমি মেয়েদের বলেছি তোমরা হিজাব পরে স্কুলে আসবা। হিজাব কীভাবে পরতে হবে তার নিয়মও ছাত্রীদের বলেছি।”
দেড় দশকের বেশি সময় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখায় কর্মরত ওই শিক্ষক সেদিনের ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, “আমি যখন ক্লাসে গেলাম, গিয়ে দেখি ভলান্টিয়াররা বাচ্চাদের চেক করছে, পোশাক ঠিক আছে কি না, নখ বড় কি না, চুল বাধা ঠিক আছে কি না।
“তখন আমি ওদের (ভলান্টিয়ার) বললাম, তোমরা সারা দিন কি করলা? বলে আপা আমরা সময় পাইনি। তখন বললাম, তাই বলে লাস্ট পিরিয়ডে চেক করবা? তা ঠিক আছে যাও, তোমাদের যা যা কাজ তোমরা বাইরে নিয়ে যাও এদের, বাইরে নিয়ে তোমাদের দায়িত্ব পালন কর, এটা বলছি, মেয়েদের বেরও করে দিইনি।”
কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করার আগে শোকজ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, “আমি আইনি পদক্ষেপ নেব।”
আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বুধবার দুপুরে বলেন, “অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা একটি তদন্ত পরিচালনা করছি।
“আমাদের বিশ্বাস, তদন্তে সত্য ঘটনা উঠে আসবে। সে অনুসারে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।”