সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
নিরাপদ ক্যাম্পাস, প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীর ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি শুক্রবার গড়িয়েছে তৃতীয় দিনে।
অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনশনকারীদের মধ্যে তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একদফা কথা বললেও দাবি নিয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে বুধবার দুপুর থেকে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে তারা এ কর্মসূচি শুরু করেন।
অনশনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন-বাংলা বিভাগের ওমর সমুদ্র, ধ্রুব বড়ুয়া ও সুদর্শন চাকমা, সঙ্গীত বিভাগের ঈশা দে ও জশদ জাকির, ইংরেজি বিভাগের আহমেদ মুগ্ধ ও নাইম শাহজাহান, মার্কেটিং বিভাগের সুমাইয়া শিকদার এবং স্পোর্টস সায়েন্সের রাম্রা সাইন মারমা।
তাদের মধ্যে ধ্রুব বড়ুয়া, সুমাইয়া শিকদার ও সুর্দশন চাকমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। তাদের সেখানে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
অনশনকারীদের একজন রাম্রা সাইন মারমা বলেন, “টানা অনশন করতে গিয়ে আমাদের প্রায় সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কমবেশি সকলকেই স্যালাইন দিতে হয়েছে।
“দাবি আদায়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত পাইনি।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে অনশনকারীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে দুই উপ-উপাচার্য ব্যর্থ হয়েছেন। তারা আলোচনার কথা বললেও তাতে কোন ফল হয়নি।
ধ্রুব বড়ুয়া বলেছিলেন, “প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবির বিষয়ে আশ্বাস না পেলে আলোচনায় বসব না বলে আমরা উনাদের জানিয়েছি।”
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শামীম উদ্দিন বলেন, “তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। তাদের কাছে আমরা একবার গিয়েছিও। আবারও আজও (শুক্রবার) আমরা যাচ্ছি। তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা সচেতন রয়েছি।”
দাবি দাওয়া নিয়ে ধ্রুব বড়ুয়া এর আগে বলেছিলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে যে সংঘর্ষ হয়েছে, সেটির ক্ষেত্রেও তারা ব্যর্থ।
“সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কমিটি হয়নি, যাতে করে সমস্যার সমাধান করা যায়। এ ছাড়া এ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তাতে প্রকৃত দোষীদের আসামি করা হয়নি। শিক্ষার্থীর সঙ্গে যে দারোয়ানের সমস্যা হয়েছে তাকে মামলায় আসামি করেনি।”
ধ্রুবর অভিযোগ, “সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দাবিতে আগে থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও কর্তৃপক্ষ ‘গা না করায়’ আমরা অনশন শুরু করেছি।”
চট্টগ্রামে গত ৩০ অগাস্টে রাতে ‘দেরিতে’ ফেরার বিতণ্ডা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধর করেন তার ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী। এই খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ সহপাঠীরা গেলে তৈরি হয় উত্তেজনা, এরপর রাতেই শুরু হয় উভয়পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষ, যা পরদিনও চলেছে দফায় দফায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাস সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের এমন সংঘর্ষে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী, প্রক্টোরিয়াল বডি ও উপউপাচার্যও আহত হন। হামলার সঙ্গে সে সময় ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগেরও’ সম্পৃক্ততা দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরাও বলছেন, গ্রামবাসীর বাইরে ‘বহিরাগতরাও’ হামলা চালিয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে।
সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’।