স্কুলে শিক্ষকের হাতে মার খাওয়া পাকিস্তানের সিস্টার জেফই বিশ্বের সেরা শিক্ষকের তালিকায় নির্বাচিত হলেন পাকিস্তানের সিস্টার জেফ।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা মূল্যে শিক্ষাদানের জন্য স্কুল গড়ে তোলা সিস্টার জেফই নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে ‘গ্লোবাল টিচার প্রাইজ’ ২০২৩ পেয়েছেন। ভারতের দীপ নারায়ণ নায়েক ছাড়া ঘানা, চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, কানাডা ও ইউক্রেনের শিক্ষকদের পেছনে ফেলে সেরা হলেন সিস্টার জেফ।
ইউনেস্কো-সমর্থিত ‘গ্লোবাল টিচার প্রাইজ’-এর খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য গ্লোবাল টিচার প্রাইজ দেওয়া হয়ে থাকে। ১৩০টি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাবিদেরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে সবাইকে পেছনে ফেলে ১০ ফাইনালিস্টের মধ্যে সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন সিস্টার জেফ।
সিস্টার জেফের জন্ম পাকিস্তানের গুজরানওয়ালায়। অল্প বয়সেই বিনা মূল্যে শিক্ষাদানের জন্য স্কুল খোলেন। শিক্ষার্থী জোগাড়ের জন্য এ বাড়ি–ও বাড়ি ঘুরতে হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, শুরুতে তাঁর স্কুলে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব ছিল।
তবে বর্তমানে নতুন ভবনের সাথে সাথে শিক্ষার নানা সুবিধা পায় শিক্ষার্থীরা। প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তাঁর প্রতিষ্ঠানে। ২৬ বছর ধরে তিনি করছেন শিক্ষকতা। এখন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। গ্লোবাল টিচার প্রাইজ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী নানা পুরস্কার পেয়েছেন সিস্টার জেফ।
এর আগে বিশ্বের সেরা শিক্ষকদের এ তালিকায় ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের জামুড়িয়া তিলকা মাঝি আদিবাসী ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েক। তিনি ‘রাস্তার মাস্টার’ নামে পরিচিত। ভারতে করোনাভাইরাসের সময় লকডাউনে বিভিন্ন স্কুলে অনলাইনে ক্লাস চলছিল।
দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছিল না। এ সময় তাদের ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন দীপ নারায়ণ। ডিজিটাল বিভেদ ঘুচে ফেলেন তিনি। সবার কাছে পৌঁছে দেন শিক্ষার আলো। বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে রাস্তায় স্কুল তৈরি করেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াতে শুরু করেন রাস্তার ওপরে। মাটির ঘরের দেয়াল হয়ে ওঠে তাঁর ব্ল্যাকবোর্ড।
রাস্তায়ই বস্তা বিছিয়ে পঠন-পাঠন করাতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে আদিবাসী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। গ্রামের কাঁচা বাড়ির দেয়ালগুলোর কোথাও স্বরবর্ণ–ব্যঞ্জনবর্ণ, কোথাও নামতা, কোথাও আবার অঙ্ক কষা থাকত। গ্রামটাই যেন একটা ক্লাসরুম হয়ে ওঠে।