মার্চ ৬, ২০২৪, ০৫:৩৪ এএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল গেটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতে রড ও লাঠিসোটা দেখা গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তি পরীক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীদের মধ্যে এ হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িত সভাপতির অনুসারীরা হলেন, আল ফারাবী (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), তানভীর আহমেদ প্রমুখ। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা হলেন, সাজিদ (শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), মিশকাত হাসান (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) ও তাদের অনুসারীরা।
এদের মধ্যে আছেন আল ফারাবী ফাইন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, মিসকাত হাসান হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, তানভীর আহমেদ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সাজিদ ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জিয়া হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদের এক ছোট ভাই (জুনিয়র) তার বান্ধবীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের পুকুর গেটে বসেছিলেন। তার ওপর পাশেই বসে ধুমপান করছিলেন মাদার বখ্শ হল ছাত্রলীগের কর্মী তানভির আহমেদ ও তার এক বড়ভাই (সিনিয়র)। ধুমপানের ধোঁয়ায় অস্বস্তি অনুভব করলে তাকে ধুমপান করতে নিষেধ করেন সাজিদের সেই ছোটভাই। এর প্রতিক্রিয়ায় তাদের সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে তানভির। পরে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে বান্ধবীকে নিয়ে বসা ওই ছোটভাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে জিয়া হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদকে বিষয়টি জানায়। পরে সাজিদ ও তার অনুসারীদের নিয়ে মাদার বখ্শ হলের দিকে আসেন। অপরদিকে তানভীর আহমদে মাদার বখশ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবীকে ডেকে আনেন। উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরা হল গেটে আসলে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ফারাবী ও তার অনুসারীরা হল থেকে রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হল গেটে এসে সাজিদ ও তার অনুসারীদের মারতে উদ্যত হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের আরেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী মিশকাত হাসানসহ অন্যান্যরা তাদেরকে প্রতিহত করেন।
পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এসময় তিনি সবাইকে দুই মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পরে জড়িতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে আসেন তিনি। সেখানে শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সমাধান না করেই টুকিটাকি চত্বর ত্যাগ করেন সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা।
ঘটনার বিষয়ে মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবী বলেন, `সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে সেটি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে সমাধান করে দিয়েছেন।` দেশিয় অস্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, `আমি কোনো লাঠিসোটা নিয়ে আসিনি। তবে এমন হতে পারে, অন্যরা কিছু নিয়ে এসেছিল, আর ঘটনাস্থলে হয়তো সেটা আমার হাতে দেখা গেছে।`
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়া হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদ বলেন, জিয়া হল ও মাদার বখ্শ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সেখানে দুই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মিলে সমাধান করে দিয়েছি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। এটা নিয়ে সেখানে হট্টগোল লেগেছিল। পরে দুই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সেটা ছাড়িয়ে দিয়েছিল। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে এক মিনিটের মধ্যে সবাইকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলি। পরে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছি। তবে ঘটনাস্থলে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, দুই হলের ‘ননপলিটিক্যাল’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি ঝামেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে মিমাংসা করে দিয়েছি। দেশিয় অস্ত্রের বিষয়ে তিনিও অবগত নন বলে জানান।
মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। পরে তারা নিজেরাই বসে মিমাংসা করে নিয়েছে।
এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আতঙ্কিত হয়ে পরেন হলে অবস্থানরত ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। অনেক পরীক্ষার্থীকে দৌঁড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতেও দেখা গেছে। এ বিষয়ে মো. রাকিব হাসান নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) আমার এ ইউনিটের পরীক্ষা। তাই রাতে থাকার জন্য আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় মাদার বখশ হলে এক বড় ভাইয়ের কাছে আসি। কিন্তু রিকশা থেকে নামার পর দেখি হলের গেটে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। তা দেখে আমি আতঙ্কিত হয়ে পরি এবং ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে যাই। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে আমার সেই বড় ভাই আমাকে তার কক্ষে নিয়ে যান।’