জানুয়ারি ২৯, ২০২২, ১২:৫৭ পিএম
করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির অযুহাত তুলে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে সেগুলো খোলা রাখার জন্য আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ।গতকাল শুক্রবার ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপুটে প্রভাবে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুল-কলেজ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। করোনার বাড়াবাড়ির কারণে গত বছরও এই ধরনের উদ্যোগ নেয় বিভিন্ন দেশ। ফলে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে যায় বহু শিশু। শিশুদের এই ঝেরে পড়া ঠেকাতে এবার করোনার কথা বলে স্কুল-কলেজ বন্ধ না করার আহ্বান জানালো জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।
বিবৃতিতে হেনরিয়েটা ফোর বলেন, “কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে এখন ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় যাতে শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত না হয়, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলো হলো-
১. স্কুল খোলা রাখুন। স্কুলগুলো বন্ধ বা আংশিক বন্ধ থাকার ফলে বর্তমানে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা জানি, ডিজিটাল সংযুক্তির পেছনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই কোনো শিশু পেছনে পড়ে থাকবে না। প্রতিটি শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে আমাদের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি কমিউনিটির প্রান্তিক শিশুদের ওপর বিশেষ লক্ষ্য রেখে কিছু বিষয়ে বিস্তৃত সহায়তা প্রদান করা। যেমন— শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া, মানসিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সহায়তা, সুরক্ষা এবং অন্যান্য পরিষেবা প্রদান।
২. শিক্ষক ও স্কুলকর্মীদের অবিলম্বে টিকা দিন। প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী এবং উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ এর টিকাদানের পরই টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং স্কুল কর্মীদের সম্পূর্ণরূপে সমর্থন ও অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
৩. অগ্রাধিকারপ্রাপ্য জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি সুরক্ষিত করার পর এবং টিকার যথেষ্ট প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে ইউনিসেফ শিশুদের টিকাদানকে সমর্থন করে। সশরীরে স্কুলে যাওয়ার জন্য টিকাদানকে পূর্বশর্ত করবেন না। কোভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সশরীরে স্কুলে যাওয়ার শর্ত আরোপ করলে তা শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউনিসেফ শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের টিকাদান ছাড়াই স্কুলগুলো খোলা রাখার এবং কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কৌশল যাতে পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনের অন্যান্য দিকগুলোতে শিশুদের অংশগ্রহণকে সহজতর করে তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করে।
৪. সংকটময় পরিস্থিতিতে সবসময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে তা আমরা স্বীকার করি। তবে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি খুবই বেশি।
শিশুদের স্কুলে রাখার জন্য সম্মিলিতভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব সবকিছু করতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।