‘নদী রক্ষায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হব’

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২৬, ২০২৪, ০১:০১ পিএম

নদী রক্ষায় শুরু হয়েছে বড় ধরনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হবো বলে মন্তব্য করেছেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।  তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান জেনারেশন অনেক ট্যালেন্ট, অনেক মেধাবী। কারণ তাদের বেশি পরিধি তৈরি হয়ে গেছে, যদি সেটাকে কাজে লাগাতে না পারি তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ে যে রক্ত ক্ষয় হয়েছে তা বৃথা যাবে। আমরা চাই না এ ধরনের অপরাধী, দখলদারদের কাছে বাংলাদেশের এত বড় একটি অহংকার, এত বড় গর্বের জায়গা পরাজিত হোক। এটা আমরা মানতে পারি না, আমরা মানবোও না। আমাদের সংগ্রাম থাকবে ও সংগ্রাম নিরন্তর চলবে।”

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

রোববার (২৬ মে) রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে ‘জাতীয় নদী কনফারেন্স-২০২৪’-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায়  নৌ-প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আজকের সম্মেলন প্রমাণ করে, নদীকে নিয়ে আমরা কত ভাবি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে সময় বঙ্গবন্ধু বিআইডব্লিউটিএর জন্য সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের দেহে শিরা-উপশিরা দিয়ে যেরকম রক্ত প্রবাহিত হয়, বাংলাদেশের নদীগুলো আমাদের সেরকম শিরা-উপশিরা। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেলে দেশ থেমে যাবে। নদীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনেক ভালোবাসা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে রক্ষা করার কথা প্রধানমন্ত্রী প্রথম বলেছেন। এর আগে কোনও সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এমন কথা বলেছেন- তার প্রমাণ নেই।”

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

শুধু নদী দখল নয়। ‘৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সব ক্ষেত্র দখল হয়ে যায় উল্লেখ করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “দখলদারিত্বের মহোৎসব চলে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ব্যক্তি বা পারিবারিক হত্যা নয়, এটি বাংলাদেশকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র।”

আমরা চাই না এ ধরনের অপরাধী, দখলদারদের কাছে বাংলাদেশের এত বড় একটি অহংকার, এত বড় গর্বের জায়গা পরাজিত হোক। এটা আমরা মানতে পারি না, আমরা মানবোও না। আমাদের সংগ্রাম থাকবে ও সংগ্রাম নিরন্তর চলবে
- খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

নৌ-প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু নৈতিকতার ওপর দেশ পরিচালনা করেছেন। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিতে পারে, সে দেশের মানুষ সোনার বাংলা তৈরি করতে পারবে না সেটা আমার বিশ্বাস হয়না। নদী-নালা, খাল-বিল আমাদের সম্পদ। নদী-নালা না থাকলে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে পারতাম না। সে সময়ে নদী-নালা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যেভাবে সুন্দরবন আমাদেরকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করছে।”

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন সমীক্ষা করেছে, দখলদারদের তালিকা করেছে। এসব জায়গায় ভুল থাকতে পারে, তবে যাত্রা শুরু হয়েছে। নদী রক্ষায় বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হব।আপনারা যারা নদী রক্ষায় কাজ করেন তারা সচেতনতা তৈরি করুন। দায়িত্ব চিহ্নিত করুন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সহায়তা করবে, সরকার সহায়তা করবে।”

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

নদী ঘিরে সভ্যতা গড়ে উঠেছে এটা সত্য উল্লেখ করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নদীর পাড়ে ইন্ডাস্ট্রি হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে, শহর হবে সবই ঠিক আছে। সেগুলো হবে নদীকে রক্ষা করে ধ্বংস করে নয়। ২০১৯ সালে ঢাকা শহরের চারপাশে নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় অনেক শক্তিশালী লোক ছিল। আমি সংসদে বলেছি সরকার বা রাষ্ট্রের চেয়ে কেউ শক্তিশালী নেই। নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য সরকার ও রাষ্ট্রের আন্তরিকতা আছে।”

নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন কোনও হাইড্রোগ্রাফি জরিপ ছাড়া বালু মহাল ইজারা দেওয়া যাবে না। একই জায়গায় বার বার বালু উত্তোলন করা যাবে না। আমরা প্রতিবছর নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে থাকি। কেউ কেউ বলেছেন-নদী দখলের সময় বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি সবাই একসঙ্গে থাকে। এটা রাজনৈতিক শক্তি নয়। তারা অপরাধী। সরকার তাদের অপরাধীদের হিসেবে দেখবে।”

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিআইডব্লিউটিএ নিরলসভাবে কাজ করছে। বিআইডব্লিউটিএর ৪৫টি ড্রেজার রয়েছে। সেগুলো কাজ করছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৪০ শতাংশ সরকারি, বাকি ৬০ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খনন করা যাবে। সরকারের ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে আমাদের ১৫০টি সরকারি ড্রেজার প্রয়োজন। রাবনাবাদ চ্যানেলে ড্রেজিং হয়েছে। সিলটেশন হয়েছে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত আছে, এতে আরও সিলটেশন হবে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের সম্মেলন আরও বেশি পথ দেখাবে।”

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ, নৌ-মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. শরীফ উদ্দিন, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন, একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. এজাজ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন, লেখক ও সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, নদী সংগঠক জুলিয়েট কেয়া মালাকার, রণজিত দত্ত, আলিউর রহমান, নুর আলম শেখ, পল্টন হাজং, এস এম মিজানুর রহমান, খাইরুল ইসলাম ও তোফাজ্জল হোসেন সোহেল।

‘নদী বাঁচাই, দেশ বাঁচাই’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় নদী সম্মেলন ২০২৪ আজ শেষ হয়েছে। এএলআরডি, বেলা, ওয়াটার রাইটস ফোরাম, রিভারাইন পিপল, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

Link copied!