মনের ভেতর থাকুক না মান অভিমান, বছরে একটা দিন বিশ্ব ভালবাসা দিবসের উপলক্ষকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে আসুন। হাওয়া বদল হলে মনটাও ভাল হয়ে যাবে।
শহুরে জঞ্জালে ঘেরা, ব্যস্ততাপূর্ণ জীবন থেকে একটা দিন বের করে নিজের সঙ্গীকে দিন। ঝেড়ে ফেলুন সকল মানসিক অভাব, অভিযোগ। সাথে কাজে লাগান ভালবাসা দিবস ও বসন্তের আগমনের উপলক্ষ।
ঢাকার অদূরেই রয়েছে এমন কিছু সৌন্দর্যে ঘেরা রিসোর্ট যেগুলো আপনার মনকে প্রশান্তি দিবে ঠিকই, আপনার রোম্যান্টিক জীবনকে করে তুলবে আরও মোহনীয়।
এখন যে রিসোর্টগুলোর কথা বলবো সেখানে যাবেন কি যাবেন না সেটা আপনার বাজেট, নৈকট্য, রেটিং ইত্যাদি বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে।
গুগল রেটিং ৫ এর মধ্যে ৪.১
ঢাকার সন্নিকটেই সাভারের আমিনবাজারস্থ মধুমতি মডেল টাউন এলাকার একটি ছোট বুটিক রিসোর্টের নাম ছায়াবীথি। রাজধানীর কাছাকাছি হলেও এর চোখ ধাঁধানো শান্ত প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য রীতিমত চমকে দেয়। অদূরে তুরাগ নদী চোখে না পড়লেও, তবে রিসোর্টের ভেতরে লম্বা লেকের উপর করা হয়েছে সুদৃশ্য ব্রিজ।
দিনব্যাপী ঘুরে বেড়ানোর জন্য এখানকার খরচ শুরু হয় ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে রাত্রিযাপনের জন্য ন্যূনতম খরচ ৭ হাজার টাকা। এই খরচে মিলবে বারান্দা ও উঠোন সহ ব্যক্তিগত কটেজ, ঘরে চা-কফির ব্যবস্থা, সকাল ও বিকেলের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার। এছাড়াও আছে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা এবং লেকে নৌকা চালানোর সুবিধা।
গাবতলী থেকে ঢাকা-আরিচা হাইওয়েতে আমিনবাজার আর হেমায়েতপুরের মাঝে পড়ে মধুমতি মডেল টাউন বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাম দিকে দ্বিতীয় চৌরাস্তা পর্যন্ত যেয়ে বামের পথ ধরে একদম সোজা গেলেই পড়বে ছায়াবীথি।
ফেসবুক রেটিং ৫ এর মধ্যে ৪.২
পূর্বাচল এলাকার শীতলক্ষ্যা নদী তীরবর্তী একটি নান্দনিক রিসোর্ট এটি। রিসোর্টটিতে যাওয়ার পথে উপভোগ করতে পারবেন ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের আধুনিকতা।
শুধুমাত্র সুইমিং পুল আর থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি নারায়ণগঞ্চের আতলাপুর গ্রামে অবস্থিত রিভারভিউ পূর্বাচল রিসোর্ট অ্যান্ড পার্ক। পুরো রিসোর্টটি কটেজ জোন, স্পোর্টস জোন এবং পিকনিক জোন- এই ৩টি ভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে সামনে রেখে সারাদিন ব্যাপী যুগলদের প্রত্যেকের জনপ্রতি খরচ হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এই মূল্যে পাওয়া যাবে এসি কটেজ, সুইমিংপুল, সন্ধ্যার নাস্তা, এবং নদীর পাশে খোলা জায়গায় মধ্যাহ্নভোজের সুযোগ।
গুগল রেটিং ৫ এর মধ্যে ৪.২
মেঘনা নদীর তীর ছুঁয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় এক টুকরো প্রকৃতি ও কৃত্রিমতার মিলনস্থলের নাম সুবর্ণ ভূমি রিসোর্ট।
সারা দিন এখানে ঘুরে বেড়াতে খরচ শুরু হয় জনপ্রতি ১ হাজার ৮৯৯ টাকা থেকে। এই খরচায় মিলবে মধ্যাহ্নভোজে চাইনিজ, চা বা কফি ও স্ন্যাকস, লকার সহ সুইমিং পুল, এবং ইনডোর-আউটডোর খেলাধুলার সুবিধা। রাতে থাকতে হলে রিভারভিউ রুমের জন্য খরচ পড়বে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা, আর পুলভিউ রুম ভাড়া ১৪ হাজার ৫০০ টাকা।
যাত্রাবাড়ি থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে উঠতে হবে ডানের ঢাকা-সোনারগাঁও রোডে। এ পথে সোজা মেঘনা ব্রিজ পেরিয়ে ডানে মোড় নিয়ে হোসেন্দির পথ ধরতে হবে। অতঃপর হোসেন্দি ব্রিজ পার হয়ে হোসেন্দি-গজারিয়া রোড ধরে এগোলে প্রথমে পড়বে ইসমানীর চর এলাকা। এই এলাকার নদীর ধার সংলগ্ন শিপবিল্ডার্সের আগেই পড়বে সুবর্ণ ভূমি।
গুগল রেটিং ৫ এর মধ্যে ৪.৩
ঔষধি ও বনজ গাছে বিস্তীর্ণ এলাকার ডেইরি ফার্ম, মৎস্য হ্যাচারি, তেলের ঘানি, প্রাকৃতিক লেক, কম্পোস্ট সার প্লান্ট, এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট বিশেষত্ব দিয়েছে ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টকে। এটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার অন্তর্গত মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত। পুরোটা শীত জুড়ে সর্পিলাকার লেকগুলোকে দখল করে রাখে অতিথি পাখির দল।
এই শীতকে আরও স্মরণীয় করে রাখতেই দম্পতিদের জন্য পুরো ১ দিনের প্যাকেজ দিচ্ছে রিসোর্টটি।
ছুটির দিনগুলোতে ১৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা, আর অন্যান্য দিনগুলোতে ১২ হাজার ৫০০ থেকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা।
এই প্যাকেজে রাখা হয়েছে ২ জনের জন্য দুপুর, রাত এবং পরের দিনের সকালের খাবার, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, সন্ধ্যায় মুভি শো এবং নৌকায় ঘুরে বেড়ানো।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে মাওনা পর্যন্ত যেয়ে পশ্চিমের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে। অতঃপর উত্তর দিকে মোড় নিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছানো যাবে ড্রিম স্কোয়ার রিসোর্টে।
গুগল রেটিং ৫ এর মধ্যে ৪.৪
গাজীপুরের রাজাবাড়িতে অবস্থিত সারাহ রিসোর্টে। প্রায় ২০০ বিঘার এই দর্শনীয় স্থানটি গড়ে উঠেছে একদম অভিজাত ভাবে। ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল প্যাকেজটি চালু থাকবে মার্চের ৯ তারিখ পর্যন্ত।
শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে এখানে সারা দিন ঘুরে বেড়াতে জনপ্রতি খরচ হবে ৩ হাজার ২৯০ টাকা। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর জন্য এই প্যাকেজ মূল্য ২ হাজার ৬৯০ টাকা। প্যাকেজের মধ্যে থাকছে সকালের নাস্তা, বুফে লাঞ্চ, সুইমিং পুল, জ্যাকুজি, মিনি চিড়িয়াখানা পরিদর্শন এবং রেহান লেকে ভেসে বেড়ানো।
এছাড়াও রাত্রিযাপনের জন্য অভিজাত স্যুটগুলোতে থাকছে ৪০ শতাংশ ছাড়। মান ভেদে কটেজগুলোতে ডিসকাউন্টের পর খরচ হবে ৬ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা।
রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট হয়ে রাজাবাড়ী বাস স্টপ থেকে ডানে মোড় নিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার গেলে সারাহ রিসোর্ট।
ঢাকার নিকটবর্তী এই ৫টি রিসোর্টের প্রত্যেকটিই মূলত ভালবাসা দিবসের ভিন্ন আঙ্গিকের পরিবেশনা। রিসোর্টগুলো তে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে ১০-৫০% পর্যন্ত ছাড়ও অফার করা হচ্ছে। আপন নীড়ে ফিরে আসার পর স্মরণীয় এক দিনের গল্প বলার খোরাক যোগাবে এই দর্শনীয় স্থানগুলো। সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে ভালবাসার মানুষের সাথে কাটানো সময়টুকু।