হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় নতুন থেরাপিতে ‘যুগান্তকারী’ সাফল্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম

হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় নতুন থেরাপিতে ‘যুগান্তকারী’ সাফল্য

অ্যাস্থমা বা হাঁপানির কারণে শ্বাসকষ্ট অনেকের সারা জীবনের সমস্যা। ওষুধ হিসেবে নিয়মিত কর্টিসন নিলেও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ধাক্কা সামলাতে হয়। একেবারে নতুন ধরনের চিকিৎসা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করছে।

সন্তানদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে হাঁপিয়ে না উঠে বলের পেছনে ছোটা ডিয়র্ক ব্যোমের জন্য বেশ কঠিন ছিল। তার প্রচুর শ্বাসকষ্ট হতো। নিজের সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার কখনো অ্যাস্থমা অ্যাটাক হয়নি, যার ফলে মুখ নীল হয়ে যায়। কিন্তু সারাক্ষণ নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় চাপ বোধ করতাম। মনে হতো, যেন ফুসফুসের ওপর কিছু একটা চেপে রয়েছে। ফলে অনেক শক্তি দিয়ে বাতাস নিতে হতো।”

তবে সুখবর হলো, ৪২ বছর বয়সী মানুষটি আবার খেলাধুলা করতে পারছেন। তার কঠিন অ্যালার্জিক অ্যাস্থমা রয়েছে, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কর্টিসন ওষুধের ডোজ বাড়িয়েও লাভ হয়নি।

বহুকাল ধরে চিকিৎসকরা কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো অ্যাস্থমার উপসর্গের চিকিৎসা করে প্রাণঘাতী শ্বাসকষ্টের আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

কিন্তু এক বিশেষজ্ঞ চিকৎসকের মতে, বর্তমানে এমন মনোভাব পুরোপুরি সেকেলে হয়ে গেছে।

অ্যাস্থমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রো. মারেক লমাচ বলেন, ‘‘আধুনিক থেরাপির আওতায় আমরা রোগীদের এমন ওষুধ দেই, যা সমস্যা সৃষ্টি হতেই দেয় না। অর্থাৎ রোগীকে নিয়মিত যত কম ডোজ সম্ভব ওষুধ খেতে হলেও তার আর শ্বাসকষ্ট হয় না। তাকে হাসপাতালে যেতে হয় না, একেবারে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে।”

ডিয়র্ক ব্যোমেকে তথাকথিত “বায়োলজিক্স” ওষুধ খেতে হচ্ছে, যা আসলে জৈব উপায়ে সৃষ্টি করা অ্যান্টিবডি। সেই চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে। শুধু বছরে দুইবার তাকে চেকআপ করাতে হয়।

ডাক্তারি পরিভাষায় ডিয়র্কের শ্বাসকষ্ট “আপার নর্মাল রেঞ্জ”-এ রয়েছে।

পালমোনোলজিস্ট ড. সসেমিরা হাইন বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে খুবই ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। ‘ক্লিনিকাল পিকচার' অর্থাৎ তার সার্বিক অবস্থা খুবই ভালো। ফলে নানা সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসর্বস্ব কর্টিসন ওষুধ দিতে হয়নি।”

ক্রনিক অ্যাস্থমার কারণে ডিয়র্ক ব্যোমের ফুসফুসের ক্রিয়া কিছুটা সীমিত হলেও বর্তমানে তিনি সুস্থ বোধ করছেন। তার শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল। অথচ নতুন থেরাপি শুরু হওয়ার আগে জীবন অনেক কঠিন ছিল। স্প্রে অথবা ট্যাবলেটের আকারে সব সময়ে কর্টিসন নিতে হতো। তা সত্ত্বেও তিনি প্রায় প্রতিদিন অসুস্থ বোধ করতেন।

ডিয়র্ক বলেন, ‘‘নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে ভালো বোধ করতাম না। হাত কাঁপতো, হাই ডোজের কর্টিসনের কারণে চঞ্চল থাকতাম। তা সত্ত্বেও উন্নতি হয়নি।”

কর্টিসন প্রয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদী থেরাপি যে উপকারের বদলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপকার করে, তা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও ডিয়র্ক ব্যোমের ডাক্তার শ্বাসনালীর ক্রনিক ইনফ্লামেশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্টিসনকে অপরিহার্য মনে করছেন। অবশ্যই বায়োলজিক্স ওষুধের পাশাপাশি সেটি নিতে হচ্ছে। এভাবে প্রত্যেক রোগীর জন্য সুনির্দিষ্ট থেরাপির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রো. মারেক লমাচ বলেন, ‘‘আজকাল স্পষ্ট বলতে হয় কার কী ধরনের অ্যাস্থমা রয়েছে। অ্যালার্জি আছে কি নেই। অথবা কারো নির্দিষ্ট বায়োমার্কার রয়েছে, অতীতেও রোগের ইতিহাস রয়েছে। বার বার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। মা বা সন্তানদের কোন রোগ ছিল বা আছে। বর্তমানে সেই সব তথ্য একত্র করে রোগীর জন্য সুনির্দিষ্ট থেরাপি স্থির করতে হয়। সেই থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর।”

ডির্ক ব্যোমের নতুন থেরাপিতে ইতিবাচক সাড়া মিলছে। মাসে নিজেই তিনি দুটি করে ইঞ্জেকশন নেন। তখন থেকে শরীর-স্বাস্থ্যের ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে।

Link copied!