গত বছরের তুলনায় এপ্রিলে ডেঙ্গু রোগী দ্বিগুণ বেড়েছে

সম্পা আক্তার

এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম

গত বছরের তুলনায় এপ্রিলে ডেঙ্গু রোগী দ্বিগুণ বেড়েছে

গত বছরের চেয়ে এবার প্রথম ৪ মাসে ডেঙ্গুতে প্রায় দ্বিগুণ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৯ জন। যা গত বছরের এই সময় পর্যন্ত ছিল ৯০৮ জন।

গত বছর ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ জন, যা চলতি বছর বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। ফলে এর মধ্যেই ডেঙ্গু আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে জনসাধারণের মধ্যে।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর ভবনে এক আলোচনা সভায় মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডাবের খোসা কিনবে ঢাকা উত্তর সিটি। আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা। কারণ চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকরী হবে অনেকেরই এই নিয়ে প্রশ্ন আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বর্তমানে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০-৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন ও বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে আছেন।

এন্টোমোলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার জার্নাল অব মেডিকেল এন্টোমোলজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি শতকের প্রথম দশকের তুলনায় দ্বিতীয় দশকে দেশের তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় আধা ডিগ্রি। এডিসের প্রকোপ বৃদ্ধিতে এটা ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়লে মশার দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু দ্রুত বেড়ে যায়। এছাড়া মশার রক্ত হজমের হারও বাড়ে। যেহেতু চলতি বছর তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি বাড়ার কথা তাই ডেঙ্গু ভয়াবহতা নিয়েও চিন্তিত অনেকেই। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এবার মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ, আগের বছরের ডেঙ্গুর ধারাবাহিকতা- এসব কারণে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বছরের শুরুতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। গত বছর ডেঙ্গুতে দেশে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে খারাপের শঙ্কা আছে।’

আশঙ্কা প্রশমনে আমাদের জানা দরকার ডেঙ্গুর সংক্রমণ কীভাবে হয়
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, যা সাধারণত স্ত্রী মশা থেকে মানব দেহে বাহিত হয়। ভাইরাস বাহক মশার কামড় পাশাপাশি  অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় নবজাতকও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নেওয়া, অঙ্গ দান প্রভৃতি কারণেও ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়ে থাকে।’

আর ডেঙ্গু যদি হয়েই যায় কীভাবে বুঝবেন
চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, ডেঙ্গুর কিছু উপসর্গ আছে যেমন, তীব্র পেটের ব্যথা। দিনে তিনবারের বেশি বমি। দিনে তিনবারের বেশি ডায়রিয়া (প্রদাহ)। শরীরের কোথাও পানি জমার চিহ্ন, বিশেষ করে পেট ও পায়ের গোঁড়ালির ওপরের দিকে। দাঁতের মাড়ি, ঠোঁট বা জিহ্বায় রক্তক্ষরণের চিহ্ন। অতিরিক্ত ক্লান্তি অথবা অস্থিরতা অনুভব ও রক্তের হেমাটোক্রিটের মাত্রা বৃদ্ধি অথবা প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যাওয়া।

ডেঙ্গু হলে তারপর কী করবেন বা কী কী করবেন না
এ বিষয়ে বিষেশঙ্গ অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ডেঙ্গু হলেই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। তবে রোগীর অবস্থা যদি স্বাভাবিক না থাকে তবে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। এছাড়া কিছু উপসর্গ যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস (বহুমূত্র বা মধুমেয়), স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি (বৃক্ক) বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। কোনো কোনো ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।’

বাড়িতে থাকলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। একটু পর পর তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। বাসায় থাকলে অন্য কোনো ওষুধ না খেয়ে ব্যথা কমাতে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খেতে হবে। প্লাটিলেট হিসাব নিয়ে উদ্বেগের প্রয়োজন নেই। জ্বরের সঙ্গে মাড়ি, নাক, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া অন্যান্য সব উপসর্গের দিকে খেয়াল রাখতে হবে ও জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয়
বিষেশঙ্গ অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে এমন পোশাক পরতে হবে, যা দেহের বেশির ভাগ অংশই ঢেকে রাখে। দিনের বেলা ঘুমানোর সময়ে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। জানালায় নেট বা তারজালি ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতে-পায়ে মশা প্রতিরোধী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরে কয়েল বা মশা প্রতিরোধী উদ্বায়ী পদার্থ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া বাসার আশপাশে আবদ্ধ জায়গায় জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে।

Link copied!