দেশজুড়ে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১২, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম

দেশজুড়ে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা

ছবি: সংগৃহীত

দাবি আদায়ে এবার সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতিতে নেমেছেন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।

এই কর্মসূচিতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও, ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল এবং শিশু হাসপাতালসহ আরো কয়েকটিতে দেরিতে হলেও কোনো কোনো বিভাগের বহির্বিভাগে রোগী দেখা শুরু হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।

এদিকে আবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বহির্বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ আছে। চিকিৎসকদের কর্মসূচির কথা জানা না থাকায় সেখানে সকাল থেকে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন, অনেকে আবার সেখানেই ঘোরাঘুরি করছেন।

তবে আইসিইউ, সিসিইউসহ জরুরি চিকিৎসা বিভাগ চালু আছে।

ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে সকাল ৯টা থেকে বহির্বিভাগে রোগী দেখা শুরু করার কথা ছিল। সেখানে চিকিৎসকরা রোগী দেখতে শুরু করেছেন পৌনে ১০টা থেকে। ফলে বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড় তৈরি হয়।

মঙ্গলবার ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে দিনভর কর্মসূচি পালনের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। পাঁচ দাবিতে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক নাদিম হোসাইন।  

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বুধবার সারাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবে। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সেবা এবং বৈকালিক চেম্বার বন্ধ থাকবে। মানবিক বিবেচনায় আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাজুয়ালটি, লেবার রুমের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

“বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হল। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন। সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করবেন তারা।”

চিকিৎসকরা বলছেন, ম্যাটসদের অনেকগুলো দাবির একটা তাদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখার বৈধতা দেওয়া। বিষয়টি নিয়ে আদালতে এটি রিট আবেদন করা হয়েছে। এদিন ওই রিটের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটোরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। আবার রোগী দেখা বন্ধ আছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বহির্বিভাগে। সেখানে রোগীদের জটলা তৈরি হয়েছে সকাল থেকেই, চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি

১. এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। আদালতে চলমান এ সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সব রিট আবেদন আগামী ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বাংলাদেশে ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক নামে বিভ্রান্তিকর কোনো পদবির প্রচলন করা যাবে না, যার অস্তিত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্বের কোথাও নেই।

২. ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস /বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

৩. আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনর্নির্ধারণ এবং মানহীন সকল ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

৪. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।

৫. অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) তৈরি করতে হবে।

অপরদিকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা সরকারি/বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরি, অবিলম্বে দশম গ্রেডে শুন্য পদে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে।

পাশাপাশি তারা চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে কারিকুলাম সংশোধন ও ভাতাসহ এক বছরের ইন্টার্নশিপ, প্রস্তাবিত ‘অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড’ বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে বোর্ড গঠন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।

Link copied!