অ্যানেস্থেসিয়ায় হঠাৎ এত মৃত্যু কেন, গলদ কোথায়?

সম্পা আক্তার

এপ্রিল ৩, ২০২৪, ০৪:০০ পিএম

অ্যানেস্থেসিয়ায় হঠাৎ এত মৃত্যু কেন, গলদ কোথায়?

সংগৃহীত ছবি

শিশু আয়ান কিংবা আহনাফের মত আরও অনেকেরই ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর খবর প্রতিনিয়ত উঠে আসছে গণমাধ্যমে। বেশিরভাগ মৃত্যুই অ্যানেস্থেসিয়ার কারণে হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এই অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। গত চল্লিশ বছর ধরে অ্যানেস্থেসিয়ায় ব্যাপক হারে ব্যবহৃত ওষুধ হ্যালোথেন নিয়ে সম্প্রতি নানা প্রশ্ন উঠেছে।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হ্যালোথেন এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কেন হ্যালোথেন মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে তা জেনে নেওয়া যাক।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ান্স এর সভাপতি ডাক্তার দেবব্রত বণিক বলেন, ‘আমাদের দেশে অ্যানেস্থেসিয়ায় হ্যালোথেনের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। তবে তিন থেকে চারটি কোম্পানি এই ওষুধ আমদানি করতো। এছাড়া, স্থানীয়ভাবে উৎপাদনও করতো এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি কোম্পানি। গত এক বছর সেই কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ইদানিং অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার ফলে অনেকগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় কোম্পানি এই হ্যালোথিন উৎপাদন না করলেও এখনো অনেক দোকানে প্রচুর হ্যালোথেন পাওয়া যাচ্ছে। যা নির্দ্বিধায় বিক্রি করছেন দোকানীরা। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, এক বছর ধরে যে ড্রাগ বন্ধ হয়ে গেল সেটি তারা কোথা থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করছে? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে সকল হেলোথেন বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেগুলোও কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই বোতলজাত করা হচ্ছে এবং এর সাথে কী ধরনের মেডিসিন মেশানো হচ্ছে তা নিয়েও কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। কোয়ালিটি এবং কোয়ান্টিটি ঠিক না থাকায় এর ব্যবহারে বারবার দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছিল। গত ১২ বছরে ভুল চিকিৎসায় এমন মৃত্যুর অভিযোগ এসেছে ২৬৮টি।’

তিনি আরও জানান, ‘রোগীরা জানায়, এ ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পরেও তারা পুরোপুরি জ্ঞানে ছিল। যার মানে অ্যানেস্থেসিয়ায় ব্যবহৃত হ্যালোথেন শরীরে কোন কাজে করেনি। এছাড়া একবার কোনো রোগীর শরীরে এই ভুয়া হ্যালোথেন প্রবেশ করলে এর ফলে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, জ্বর, বমি নিউমোনিয়া ইত্যাদি সমস্যা সহ মৃত্যুও ঘটে থাকে।’

অবৈধভাবে প্রস্তুত এই হ্যালোথেন আগের দুর্ঘটনাগুলোর পেছনের কারণ বলে মনে করছেন তিনি।

অধ্যাপক ডাক্তার দেবব্রত বণিক আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশে হ্যালোথেনের ব্যবহার বেশি তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর দাম এবং ব্যবহারের যন্ত্রপাতি সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ সুযোগ পেলেই এই ওষুধ কিনবে। তাই সবার আগে উচিত  হ্যালথেনের যথেচ্ছ বিক্রি বন্ধ করা। ফলে গত কয়েকমাস যাবৎ এর সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সেমিনারের পাশাপাশি বিষয়টি সরকারকে জানানো হয়। এরপরেও বাজারে প্রচুর হ্যালোথেন এখনো পাওয়া যাচ্ছে। যার বেশিরভাগই মূল কোম্পানির নাম দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘হ্যালোথেনের বিকল্প হিসেবে এখন আইসোফ্লুরেন বা সেভোফ্লুরেনের মত নতুন ওষুধ ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে এটি ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক হাসপাতাল এখনো অ্যানেসথেসিয়ায় হ্যালোথেনের ব্যবহার করে যাচ্ছে। রোগীকে নিরাপদ রাখা আমাদের দায়িত্ব, সেই জায়গা থেকেই এ সকল নতুন ওষুধের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ফলে চলতি বছর এর ব্যবহার ও বিক্রি দুটোই নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কেউ এটি অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’

 এছাড়া, ওষুধের উপর অতিরিক্ত ট্যাক্স কমিয়ে আনার প্রত্যাশা জানান এই চিকিৎসক।

Link copied!