অপরিশোধিত খালের পানি ব্যবহারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দক্ষিণাঞ্চলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৫, ২০২১, ১২:৩১ এএম

অপরিশোধিত খালের পানি ব্যবহারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দক্ষিণাঞ্চলে

কোন ধরনের পরিশোধন ছাড়াই খালের দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করে ই-কোলাইর মত মরণঘ্যাতি ডায়রিয়ার জীবাণুও শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

৩ টি কলেরার জীবাণু শনাক্ত

প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন করে সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ১৫ মার্চ থেকে আইইডিসিআর-এর ছয় সদস্যের একটি দল সেখানে কাজ করে। সার্ভিলেন্স দলের সদস্যরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ২০ মলের নমুনার মধ্যে ৩টিতে কলেরার জীবাণু শনাক্ত করেন। এ ছাড়া বাকিগুলোতে ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এ ব্যাক্টেরিয়ার কারণে মারাত্মক পর্যায়ের ডায়রিয়া এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আনুসাঙ্গিক কাজে খালের পানি ব্যবহার বেশি

পানি পান ও রান্নার কাজে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করলেও অন্যান্য কাজে খালের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। থালা বাসন ধোঁয়া, ওজু ও গোসলসহ কাপড় ধোয়ার কাজে খালের পানি ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে এই জীবাণু প্রবেশ করতে পারছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরিপ করে আইইডিসিআর দেখতে পেয়েছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ৯৪ শতাংশ নলকূপের পানি পান করেন। যদিও তাদের ৭১ শতাংশই দৈনন্দিন অন্যান্য কাজে খালের পানি ব্যবহার করেন। সমীক্ষা এলাকার মাত্র ২০ শতাংশ বাড়ির কাছে ব্যবহারযোগ্য নলকূপ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার খাল, নলকূপ ও পৌরসভার সরবরাহ করা পানিতে মাত্রাতিরিক্ত ‘কলিফর্ম ব্যসিলি’ পাওয়া গেছে।

প্রতিদিন আক্রান্ত দেড় হাজারের বেশি

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫২৪ জন। গত এক সপ্তাহে আট হাজার ৭৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ হাজার ৬৩৮ জন। তাদের মধ্যে ৩১ হাজার ৬০৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

হঠাৎ রোগের চাপে দিশেহারা স্বাস্থ্যকর্মীরা

হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় দিশেহারা অবস্থা স্বাস্থ্যকর্মীদের। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয়ও নেই পর্যাপ্ত জায়গা। তার ওপর দেখা দিয়েছে স্যালাইন সংকট। শরবত ও পান্তার সঙ্গে পুকুরের দূষিত পানি খেয়ে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, এখানে ডায়রিয়া রোগীর জন্য শয্যা আছে মাত্র চারটি। কিন্তু রোগী আছে দুই শতাধিক। প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে তারা ওয়ার্ডের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

প্রতিবছরই এই রোগ দেখা দেয়

অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর এই সময়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা একটু বাড়ে। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। দক্ষিণের ছয় জেলার মধ্যে আক্রান্তের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভোলা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে পটুয়াখালী ও বরগুনা। চতুর্থ বরিশাল, পঞ্চম পিরোজপুর আর ষষ্ঠ স্থানে আছে ঝালকাঠি। তবে মৃত্যুর দিক থেকে শীর্ষে বরিশাল জেলা। মৃত আটজনের মধ্যে চারজনই বরিশাল জেলার। বাকি চারজনের দুজন করে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভাগের ৪০ উপজেলায় ৪০৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

Link copied!