জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক শামিমা বেগমকে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিমকোর্ট ফেরার অনুমতি দেয়নি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। অথচ প্রায় ছয় বছর ধরে ব্রিটেনে প্রবেশের জন্য আইনী যুদ্ধ চালিয়েছিলেন শামিমা বেগম।
এ অবস্থায় সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ে তার ব্রিটেনে ফেরার আশা শেষ হয়ে যায়। এদিন সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেল শামিমা বেগমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
শামীমাকে ব্রিটেনে নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে বিচারপতি লর্ড রেড সেদিন বলেছেন,‘সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে স্বরাষ্ট্রসচিবের সকল আপিল মঞ্জুর করে এবং শামীমা বেগমের ক্রস আবেদন খারিজ করে দেয়। তবে, শামীমা বেগম তার নাগরিকত্ব হরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার আইনি লড়াইটি এখনো চালিয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু ব্রিটেনে গিয়ে তার লড়ার আর সুযোগ নেই। তারপরও হাল ছাড়েননি তিনি।
২০১৫ সালে ইস্তাম্বুল যাওয়ার জন্য গেটউয়িক বিমানবন্দরে তিন বন্ধু খাদিজা সুলতানা (বায়ে), শামিমা বেগম (মাঝে) ও আমিরা আবেজ (ডানে) ছবি: ডেইলি মেইল।
পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামীমা বেগম ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরও দুই বান্ধবীসহ লন্ডন থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়ে তিনি ডেনমার্কের বংশোদ্ভূত এক ধর্মান্তরিত ‘জিহাদি’কে বিয়ে করেন।
পরে আইএসের প্রতি তার মোহ কেটে যায়। তিনি ভুল বুঝতে পেরে ফিরতে চান লন্ডনে। কিন্তু তার আর লন্ডন ফেরা হল না। আদালত তার আবেদন নাকচ করে দিলেও তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চান। সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা তার চলছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আল-হওর শরণার্থীশিবিরে শামীমার দেখা পান এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। তার কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনে ফেরার জন্যই এখন নিজেকে একেবারে পাল্টে ফেলেছেন শামিমা বেগম। বদলে ফেলেছেন নিজের পোশাক-পরিচ্ছদও। ইসলামিক শরিয়া অনুয়ায়ি আগে শামিমা যেসব পোশাক পরিচ্ছদ পরতেন, এখন সেগুলো ছেড়ে পশ্চিমা পোশাকের দিকে ঝুঁকেছেন তিনি। তিনি এখন রীতিমত ‘মেমসাহেব।’
বোরকা-নেকাব ছেড়ে তিনি এখন পুরোদস্তুর পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত তিনি। ফ্যাশনেবল সানগ্লাস,রঙ করা চুলে তাকে এখন প্রথম দেখায় চিনতেই পারবে না কেউ। পশ্চিমা ওই পোশাক-পরিচ্ছদ মূলত ২১ বছর বয়সী শামীমার ব্রিটেনে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার একটি রোজ ক্যাম্প থেকে এক সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তার বেশ কয়েকটি ছবি তোলা হয়। সেসব ছবিতে তাকে পুরোদস্তুর ’আধুনিকা’ নারীদের মতো দেখা গেছে।
খুশিমনে ছবি তুলতে দিলেও তিনি মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তার আইনজীবী এখনও তাকে যুক্তরাজ্যে বৈধ করার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।