সুপার টাইফুন রাইয়ের আঘাতে ফিলিপাইনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫-এ। শুধুমাত্র বোহোল প্রদেশেই অন্তত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রদেশটির গভর্নর আর্থার ইয়াপ জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) দেশটির কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সরকারিভাবে ফিলিপাইনে টাইফুন রাইয়ে মৃতের সংখ্যা এখনও ৩১ জনই আছে। বোহোলের মৃতের সংখ্যাটি তাদের জানা আছে কিনা, এমন প্রশ্নে দেশটির দুর্যোগ সংস্থা জানায়, তাদের অপারেশন্স ইউনিট প্রাদেশিক ইউনিটের দাপ্তরিক প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে।
রয়টার্স আরও জানায় টাইফুনের আঘাতের পর দেশটির সেবু ও বোহোলে রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি সেনা ও জরুরি সেবাদান কর্মী।
বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে অনেক বাড়িঘর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভবনের পাশাপাশি রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে । এছাড়াও বেশ কয়েকটি এলাকায় ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। সুপার টাইফুন রাইয়ের আঘাতে দেশটির বিপর্যস্ত মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র খাদ্য ও পানি সংকট। দেখা দিয়েছে।
দেশটির জনপ্রিয় পর্যটন স্পট বোহোলের গভর্নর আর্থার ইয়াপ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানান, “টাইফুন রাইয়ের আঘাতে তার নিজের শহরে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১০ জন। এ ছাড়া, টাইফুনের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন। দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যাকবলিত রাজ্যে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় রাই দেশটির সিয়ারগাও দ্বীপে আঘাত হানে। এর আগেই কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো।
বৃহস্পতিবার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯৫ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে সাগর থেকে দ্বীপপুঞ্জটির স্থলভাগে উঠে আসে রাই। এর তাণ্ডবে অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্তত চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ লাইনগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বোহোলের গভর্নর আর্থার ইয়াপ জানান, রাই তাণ্ডব চালানোর দুই দিন পরও বোহোলের বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ লাইনগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ইয়াপ আরও বলেন, “এটি অত্যন্ত পরিষ্কার, বোহোলের সব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘর ধ্বংস ও ফসলহানি হওয়ায় লোকজন মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছে।” সুপেয় পানিসহ ত্রাণ সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রাই চলতি বছর ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানা ১৫তম টাইফুন এবং সবচেয়ে প্রাণঘাতী ক্রান্তীয় ঝড়গুলোর একটি। ভয়ংকর এই ঝড়টি দেশটির নয়টি দ্বীপে তাণ্ডব চালিয়েছে। সেবু, লেইতে, সুরিগাও দেল নর্তে, সিয়ারগাও ও দিনাগাত প্রদেশে ব্যাপক ধ্বংসের একটি পথরেখা রচনা করে এগিয়ে গেছে রাই।
দিনাগাত প্রদেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জেফরি ক্রিসোস্তোমোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ঝড়ে দ্বীপটির দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।