শিয়া নেতা মোকতাদা সদরের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণায় বাগদাদ রণক্ষেত্র

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৩০, ২০২২, ০৩:২৩ পিএম

শিয়া নেতা মোকতাদা সদরের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণায় বাগদাদ রণক্ষেত্র

ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদরের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণায় রাজধানী বাগদাদ এখন রণক্ষেত্র। ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী শহরটিতে। সোমবার থেকে ওই সহিংসতায় প্রায় ২০ জন নিহত হয়েছেন। সরকারি ভবনগুলোতে চড়াও হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে বাগদাদে।

স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, রাত নামতেই বাগদাদের সুরক্ষিত গ্রিনজোন এলাকায় মেশিনগানের গুলির শব্দ শোনা যায়। এ এলাকায় সরকারি সদর দপ্তর ও দূতাবাসগুলো অবস্থিত। কয়েক বছরের মধ্যে এটি রাজধানীতে সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষের ঘটনা।

এর আগে সদর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষয়িষ্ণু সরকারি ব্যবস্থা সংস্কারে অন্য শিয়া নেতা ও দলগুলোর ব্যর্থতার কারণে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে মনে করা হচ্ছে। সদরের ঘোষণার পর রাজপথে নেমে আসেন তাঁর সমর্থকেরা। তাঁরা গ্রিনজোনে সরকারি ভবনগুলোতে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় সদরের নিয়ন্ত্রিত মিলিশিয়াসহ তাঁর অনুসারীরা ইরান–সমর্থিত আধা সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।

সহিংসতা ও সব পক্ষের অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অনশন পালনের ঘোষণা দিয়েছেন মোকতাদা আল-সদর। কয়েক দশকের যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, বেসামরিক দ্বন্দ্ব ও দুর্নীতির মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ইরাক। এ অবস্থায় সদর ও প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া মুসলিমদের মধ্যকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেশটিকে আরেক দফা সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

সদর অক্টোবরের নির্বাচনে বিজয়ী হন। তিনি ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকার গঠনে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পার্লামেন্ট থেকে তাঁর দলের আইনপ্রণেতাদের পদত্যাগ এবং সমর্থকদের সরকারি ভবন দখলে নিলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সোমবার তা সহিংসতায় রূপ নেয়।

নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, সদর নিয়ন্ত্রিত পিস ব্রিগেডসের যোদ্ধা ও গ্রিনজোনের সুরক্ষায় নিয়োজিত ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তবে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারাও এতে জড়িত থাকতে পারে। অবশ্য রয়টার্স সোমবার রাতের গোলাগুলির ঘটনায় কারা জড়িত, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।

কয়েক সপ্তাহ ধরে পার্লামেন্ট ভবন দখল করে রেখেছেন সদরের সমর্থকেরা। পরে তাঁরা প্রেসিডেন্ট ভবনে চড়াও হন। এটি একসময় প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের প্রাসাদ ছিল। সেখানে সুইমিং পুলে বিক্ষোভকারীদের ঝাঁপ দিতে ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে ইরাকি সামরিক বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের গ্রিনজোন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কুয়েত সরকারের পদক্ষেপ:

সহিংসতার ঘটনায় নিজ দেশের নাগরিকদের ইরাক ছাড়তে বলেছে কুয়েত। একই সাথে যাঁদের ইরাক সফরের পরিকল্পনা রয়েছে, তা স্থগিত করতে বলা হয়েছে।

সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইরান:

সহিংসতার ঘটনায় ইরাকের সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। উড়োজাহাজের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। নাগরিকদের এ সহিংসতার মধ্যে সফর না করার পরামর্শ দিয়েছে দেশটি।

ইরাকের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রভাবের বিরোধিতা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান মোকতাদা আল–সদর। রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে তিনি দ্রুত নতুন নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এই শিয়া নেতার দাবি, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর ক্ষমতায় ছিলেন, এমন কোনো রাজনীতিকের সরকারি দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।

সূত্র: রয়টার্স ও আল-জাজিরা

Link copied!