হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৬৬ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের এখন এভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হবে।
এই যুদ্ধ গত ৭ অক্টোবর শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৬৬ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএলও এবং ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (পিসিবিএস) বুধবার(২০ ডিসেম্বর) জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের কর্মসংস্থান দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ১ লাখ ৯২ হাজার চাকরির সমান।
দখলকৃত পশ্চিম তীরের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। এখানে কর্মসংস্থান এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২ লাখ ৭৬ হাজার চাকরির সমান।
আইএলও এবং পিসিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের আগে থেকেই গাজায় চাকরির বাজারে মন্দাভাব ছিল। আর যুদ্ধ এই অঞ্চলে বিরাজমান চাকরির বাজারের মন্দাভাবকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন থেকে দারিদ্র্যের উচ্চ হার, দুর্বলতা ও বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বেকারত্বের হারের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। আর এখন এই অঞ্চলটি মূলত বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।
গাজা উপত্যকায় বেকারত্বের হার এখন শ্রমশক্তির তিন-চতুর্থাংশ ছাড়িয়ে গেছে। পশ্চিম তীরের শ্রমশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখন বেকার। কয়েক দশকের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
পিসিবিএসের প্রেসিডেন্ট ওলা আওয়াদ বলেছেন,‘সংকট ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক কাঠামোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। গাজা উপত্যকায় বেকারত্বের হার এখন শ্রমশক্তির তিন-চতুর্থাংশ ছাড়িয়ে গেছে। পশ্চিম তীরের শ্রমশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখন বেকার। কয়েক দশকের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।’
সংস্থা দুটি বলছে, এই মানবিক বিপর্যয় শ্রমবাজারকে ধ্বংস করেছে। এর কারণে মানুষকে আজীবন কষ্ট করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হবে।
আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য নিয়োজিত আইএলওর উপ–আঞ্চলিক পরিচালক পিটার রাডমেকার জেনেভা থেকে আল–জাজিরাকে বলেছেন, এই উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের কারণে গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘আগামী অনেক মাস ও বছর ধরে দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করবে’। তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের আগেও দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় শ্রমবাজার হতাশাজনক ছিল।’
পিটার রাডমেকার বলেন, ‘(যুদ্ধ চলছে) গাজা ও পশ্চিম তীরের অনেক লোকের আয় থাকবে না, মজুরি থাকবে না। কেউ তাঁদের কোনো অর্থ দেবে না। ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর তাঁদের নির্ভর করতে হবে।’
বর্তমান পরিস্থিতি ফিলিস্তিনের জনগণকে নির্ভরশীল অবস্থায় ফেলে দেবে এবং আগামী বহু বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সাহায্যের অর্থ বিতরণের একটি অংশের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
পিটার রাডমেকার আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত সামাজিক সহায়তা প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে সরকারি কোনো তহবিল নেই। তাই এটি বাইরে থেকেই আসতে হবে। আমরা সবাই জানি, বিশ্বব্যাপী অনেক সংকট চলছে। তাই ফিলিস্তিনের প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি নেই।’
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি মূল্যায়নে দেখা গেছে, গাজা উপত্যকায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪০ হাজার ভবন বা প্রায় ১৮ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।