মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন নতুন একটি রাজনৈতিক দল গড়ার তোড়জোড় করেছেন। ইয়ামিনের আইনজীবী জানিয়েছেন, আবদুল্লাহ ইয়ামিন তাঁর উত্তরসূরির কাছ থেকে সরে এসে নতুন দল গড়তে চান। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের সামনে সংসদীয় নির্বাচনের আগেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চান তিনি।
গত সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জিতে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপসের (পিপিএম) প্রার্থী মোহামেদ মুইজ্জু। ১৭ নভেম্বর শপথ নেন তিনি। মুইজ্জু চীনঘেঁষা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত।
এবারের নির্বাচনে মোহামেদ মুইজ্জু মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) নেতা ও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহকে হারিয়ে ক্ষমতায় বসেন। সলিহ ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত। আর সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনও চীনঘেঁষা।
মালদ্বীপ শুধু পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি দেশ নয়, ভারত মহাসাগরে অবস্থানের কারণে ভূরাজনৈতিকভাবেও দেশটির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। পূর্ব–পশ্চিমের নৌ–বাণিজ্যপথ মালদ্বীপ ছুঁয়ে গেছে।
মোহামেদ মুইজ্জুর বয়স ৪৫ বছর। তাঁকে অনেকে আবদুল্লাহ ইয়ামিনের ‘প্রক্সি’ হিসেবে বিবেচনা করেন। কেননা দুজনের মতাদর্শ ও রাজনৈতিক ভাবধারা একই। তাঁরা ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
ইয়ামিন দুর্নীতির দায়ে ১১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তাই এবারের নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। এ কারণে ইয়ামিনের ‘প্রক্সি’ হয়ে মুইজ্জু ক্ষমতায় বসেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে।
মুইজ্জু নতুন সরকার গঠনের সপ্তাহ পেরোতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। ইয়ামিনের নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার তোড়জোড় তাঁকে ভাবাচ্ছে। ইয়ামিনের অভিযোগ, মুইজ্জু পিপিএমে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ‘ছিনতাই’ করার চেষ্টা করছেন। তাই নতুন দল গড়ে তিনি মুইজ্জুকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন।
ইয়ামিনের বয়স এখন ৬৪ বছর। তিনি চাইছেন, পিপিএম থেকে পদত্যাগ করবেন। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সঙ্গে গড়া জোট ভেঙে দেবেন। গতকাল শুক্রবার এমনটি জানিয়েছেন ইয়ামিনের আইনজীবী মোহামেদ জামেল।
আগামী বছর মালদ্বীপে সংসদীয় নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হবে। এর আগে নতুন রাজনৈতিক দলের ভিত্তি মজবুত করে বেশির ভাগ আসনে জয় পেতে মরিয়া ইয়ামিন।
মোহামেদ জামেল বলেন, ইয়ামিন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বাড়িতে থেকে সাজা ভোগ করছেন তিনি। মুইজ্জুর জয়ের পরপরই তিনি এ সুবিধা পেয়েছেন।
এখন মুইজ্জুর সাথে ইয়ামিনের দূরত্ব বেড়েছে বলে জানান মোহামেদ জামেল। তিনি বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট এখন ইয়ামিনের ফোনকল ধরেন না। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর দপ্তর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইয়ামিন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে চীনের ওপর ঝুঁকে পড়েছিলেন।
নির্বাচনে জয়ের পর মুইজ্জু জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি শুধু ‘মালদ্বীপপন্থী’ হবেন। সেই সাথে তিনি চীন ও ভারতের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। যদিও মুইজ্জু তাঁর দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহারে ভারতকে অনুরোধ করেছেন।