জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১২:১৩ পিএম
কাতারের রাজধানী দোহায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়টি ৪২ দিন স্থায়ী হবে এবং এ সময় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস তাদের হাতে বন্দি থাকা ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবেন।
গতকাল সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েলের ধারণা, মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের বেশিরভাগই জীবিত আছেন। সোমবার এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তবে যারা মুক্তি পাবেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ‘নিহত’ জিম্মিও থাকবেন—অর্থাৎ, তাদের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করবে হামাস।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে হামলা চালায় হামাস। সে সময় ২৫১ ব্যক্তি জিম্মি হন। তাদের মধ্যে এখনো ৯৪ জন হামাস ও তাদের মিত্রদের কাছে বন্দী আছেন বলে ধারণা করা হয়।
ইসরায়েলি সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ৯৪ জনের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ হস্তান্তরকেও জিম্মি মুক্তির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদ
ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে এবং এর শর্তগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত আছে।
সোমবারের এক বক্তব্যে একই ধরনের আশাবাদ প্রকাশ করেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
পররাষ্ট্রনীতির ওপর দেওয়া এই বক্তব্যে তিনি জানান, ‘এই চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বড় আকারে চাপ অব্যাহত রেখেছে।’
‘আমরা যে চুক্তির কাঠামো তৈরি করেছি, তাতে জিম্মিরা মুক্তি পাবে, যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং ইসরায়েল নিরাপত্তা পাবে। এর ফলে আমরা হামাসের শুরু করা যুদ্ধে ভয়াবহ পর্যায়ের দুর্ভোগ পোহানো ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে পারব। তাদেরকে কার্যত নরক-যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে।’
এই আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছেন এমন এক কূটনীতিবিদ সিএনএনকে জানান, আজ মঙ্গলবার দোহায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে চুক্তির সব বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হতে পারে।
পাশাপাশি, আজ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কয়েকজন জিম্মির পরিবারের সদস্যদের দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করছে।
আসন্ন যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে এই ৩৩ জিম্মি মুক্তি পাবেন।
প্রথম চুক্তি চালুর ১৬তম দিবস থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হবে। সংশ্লিষ্টদের আশা, দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতিতে স্থায়ীভাবে গাজার সংঘাতের অবসান হবে।
চুক্তির শর্ত
সর্বশেষ প্রস্তাব মতে, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলাডেলফি করিডরে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখবে। মিশর-গাজা সীমান্তের এই অপ্রশস্ত ভূখণ্ডে চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলি সেনারা এই করিডর ছাড়বেন না।
সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ রাউন্ডের যুদ্ধবিরতি আলোচনা এই শর্তের কারণেই ব্যর্থ হয়েছিল বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। হামাসের জোর দাবি ছিল যুদ্ধবিরতির শুরু থেকেই গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক উপস্থিতি পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া।
তবে এবার হামাস এই শর্ত মেনে নেওয়ার আভাস দিয়েছে।
পাশাপাশি, ইসরায়েল গাজার ভেতর একটি বাফার জোন তৈরি করবে বলে জানান ইসরায়েলি কর্মকর্তা। ইসরায়েল-গাজা সীমান্ত নিরাপদ রাখতেই এই উদ্যোগ। তবে এই বাফার জোন কতটুকু জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হবে, তা জানাননি তিনি।
এ বিষয়টিও চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল।
৭ অক্টোবরের হামলার আগে এই বাফার জোনের আকার ছিল ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার। তবে সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল বাফার জোন বাড়িয়ে দুই হাজার মিটার করার দাবি জানালে হামাস তাতে সম্মতি দেয়নি।
ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির মাঝে উত্তর গাজার বাসিন্দারা নিরাপদে গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরতে পারবেন। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেন, যথাযথ `নিরাপত্তা ব্যবস্থা` মেনেই তাদের ফেরানো হবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিস্তারিত জানাননি কর্মকর্তা।
ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির বিপরীতে মুক্তি পাবেন ইসরায়েলি কারাগারে আটক থাকা ফিলিস্তিনিরা। তবে যাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হত্যার অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে পশ্চিম তীরে মুক্তি দেওয়া হবে না। তারা গাজা উপত্যকায় অথবা আলোচনা সাপেক্ষে দেশের বাইরে মুক্তি পাবেন।
এ বিষয়ে হামাসের কাছে মন্তব্য চেয়েছে সিএনএন।
চুক্তি আসন্ন
এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, রোববার রাতে দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ডেভিড বারনিয়ার আলোচনায় তারা আশার আলো দেখতে পেয়েছেন।
কর্মকর্তা বলেন, ‘খুব শিগগির চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে—তবে কয়েক ঘণ্টা না কয়েকদিনের মধ্যে, তা বলা সম্ভব নয়।’
তিনি জানান, চুক্তির শর্তগুলো শিগগির বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত, তবে তা শুরুতে নিরাপত্তা ক্যাবিনেট ও সরকারের পূর্ণাঙ্গ ক্যাবিনেটের অনুমোদন পেতে হবে।
এক আরব কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য বেশি প্রস্তুত আছি। তবে এখনো দোহার মধ্যস্থতাকারীরা উভয় পক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক জবাবের অপেক্ষায় আছে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন ও হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ ব্যক্তি। সেদিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক, নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল যা গত ১৫ মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে।
এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৬ হাজার ৫৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ১ লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
সূত্র: দ্যা ডেইলি স্টার বাংলা।