পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোশাখানা দুর্নীতি মামলার দেওয়া তিন বছরের কারাদণ্ড স্থগিত করেছেন ইসলঅমাবাদ হাইকোর্ট।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক ও বিচারপতি তারিক মেহমুদ জাহাঙ্গীরির সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে পাওয়া সম্পদ বিক্রি করা এবং সেই তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ওই মামলায় দোষি সাব্যস্ত হওয়ায় ইমরান খানকে তিন বছরের দণ্ড দিয়েছিলেন ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। পাশাপাশি এক লাখ রুপি জরিমানাসহ আদালত পিটিআই চেয়ারম্যানকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করেন।
ওই রায় ঘোষণার পর পরই ইমরানকে তার লাহোরের জামান পার্কের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর থেকে তিনি পাঞ্জাবের অ্যাটোক কারাগারে আটক আছেন।
ইমরান খান কারাগারে যাওয়ার পরই কারাদণ্ডের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন। স্থানীয় সময় সোমবার এ ব্যাপারে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে শুনানি হয়। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমীর ফারুক এবং বিচারক তারিক মাহমুদকে নিয়ে গঠিত দুই সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণার তারিখ ২৯ আগস্ট নির্ধারণ করেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১১টায় এ ব্যাপারে রায় দেওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১টার পর রায় ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত বুধবার পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট এক পর্যবেক্ষণে জানায়, ইমরানের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের যে রায় দেওয়া হয়েছে, সেই রায়ে গুরুতর ত্রুটি ছিল। ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট জানান, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এই রায়ের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেন সেটি দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্রিকেটার কাম রাজনীতিবিদ ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার উত্থান-পতনের। এক সময় বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন তিনি। দেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। খেলার জগৎ ছেড়ে ব্রিটেনের অন্যতম ধনকুবের স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমা স্মিথকে বিয়ে করেন, পরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল, রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই প্রতিষ্ঠা করেন ইমরান খান। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন দলটির।
এক সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তানের মতো একটি অস্থিতিশীল দেশের। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে সেনাপ্রধান ও আদালত তাঁর বিপক্ষে চলে গেলে বিরোধী দলের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবার একজন প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। সেই প্রধানমন্ত্রীই ইমরান খান। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গদিচ্যুত হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ইমরান। গদি হারালেও রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে এক সভায় গুলিতে আহতও হন তিনি। এতে সাধারণ জনগণ তাঁর পক্ষে ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু করে।
এ ক্ষেত্রে ‘তোশাখানা বিতর্ক ইস্যুটি তাঁরা অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। এই বিতর্কের জেরে দলীয় প্রধান হিসেবে ইমরান খান থাকতে পারবেন না বলে ঘোষণা দেয় দেশটির নির্বাচন কমিশন। পিটিআই প্রধান এর বিরুদ্ধে আপিল করলে নির্বাচন কমিশনের ওই রায় স্থগিত করে লাহোর হাইকোর্ট। এখন জেতে আছেন ইমরান খানকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের অংশগ্রহণেরও অযোগ্য ঘোষণা করেছেন আদালত।প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর পর থেকেই একের পর এক আইনি জটিলতায় পড়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।