মশাই নিধন করবে মশা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ১০:৩৮ এএম

মশাই নিধন করবে মশা

নতুন পদ্ধতিতে টাইগার মশার গোষ্ঠীর বিনাশ ঘটানো যেতে পারে। ছবি ডয়েচে ভেলে

মশা মারতে কামান দাগানোর কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু কাটা দিয়েই কাটা তোলার মতো মশা দিয়েই মশা মারা গেলে কেমন হয়? সুইজারল্যান্ডে এক প্রকল্পে ঠিক সেই চেষ্টাই চালানো হচ্ছে।

দেশটির একটি ল্যাবে এশিয়ান টাইগার প্রজাতির মশার সম্ভার দেখার মতো। লার্ভা থেকে শুরু করে পরিণত বয়সের মশার কোনো অভাব নেই। এই মশার হ্যাচারিতে গবেষণা করছেন এলেওনোরা ফ্লাসিও।

সুইজারল্যান্ডের দক্ষিণে ছবির মতো দেখতে গ্রাম মরকোটেতে গবেষকরা চলতি বছর ২০ লাখ এশিয়ান টাইগার প্রজাতির মশা ছাড়ছেন।

মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এলেওনোরা ছোট এই গ্রামের প্রায় ৭০টি বিভিন্ন জায়গায় প্রতি সপ্তাহে কিছু মশা ছাড়ছেন। তবে লাখ লাখ মশা ছাড়া হলেও গ্রামের বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ এগুলো পুরুষ মশা, যা মানুষকে কামড়ায় না। শুধু উড়ে বেড়ায়। কয়েকদিন পরেই মরে যায়।

পুরুষ মশার এত কম আয়ুর কারণ স্পষ্ট। নির্বীজ করার প্রক্রিয়া, ল্যাবের ধকল ও পরিবহণের কারণে সেগুলি বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে আয়ু কম হওয়া সত্ত্বেও মাদী মশার কাছে সেগুলি আকর্ষণীয়। পুরুষ মশাকেও প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে হয়। নির্বীজ পুরুষ মশার বিশাল সংখ্যার কারণে মাদি মশাগুলো তাদের এড়িয়েও চলতে পারে না।

এলেওনোরা ফ্লাসিও বলেন, ‘স্টেরিলাইজড নর মশা মাঠে চরে বেড়ানো স্বাভাবিক মাদী মশার সঙ্গে মিলিত হয়। মিলন ঘটলে মাদী মশা সারা জীবন আর সন্তান ধারণ করতে পারে না।’

এভাবে শেষ পর্যন্ত টাইগার মশার গোষ্ঠীর বিনাশ ঘটানো যেতে পারে। পরীক্ষামূলক এলাকায় টাইগার মশার সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমানোই এলেওনোরার লক্ষ্য।

ইটালির বোলোনিয়া শহরে কৃষি ও পরিবেশ কেন্দ্রে স্টেরাইল পুরুষ মশার প্রজনন ঘটানো হয়। ডিম পাড়ার সময়েই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। খাঁচার মধ্যে মশার মিলন ঘটে। মাদী মশাকে নিয়মিত পশুর রক্ত খাওয়ানো হয়। কারণ রক্ত না চুষে খেলে সেগুলি ডিম তৈরি করতে পারে না।

সেই ডিম এক সপ্তাহের মধ্যেই লার্ভায় পরিণত হয়, তারপর পিউপা বা গুটিপোকার রূপ নেয়। এই স্তরেই তথাকথিত ‘ডাইমেনশন অ্যানালিসিস’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরুষ ও মাদী মশা আলাদা করা হয়। পুরুষ মশা মাদী মশার তুলনায় আকারে ছোট। ফলে শুধু চেহারার ভিত্তিতেই সেগুলো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আলাদা করা যায়। পিউপাগুলো পানির মধ্যে ফেলে এক্সরে করা হয়।

ফলে প্রজনন অঙ্গগুলো সবচেয়ে সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখায়। এভাবে নর মশা নির্বীজ হয়ে পড়ে, তবে প্রাণে বেঁচে যায়। এই প্রক্রিয়া অবশ্য এখনো খুবই ব্যয়বহুল। এক হাজার স্টেরিলাইজড মশার দাম প্রায় ৬০ ইউরোর মতো। ফলে চলতি বছরের এক্সপেরিমেন্টের জন্য প্রায় দুই লাখ ইউরো ব্যয় হচ্ছে।

তবে পরীক্ষা সফল হলে কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া অনেক সস্তা হয়ে যাবে। বাণিজ্যিক স্বার্থ দেখা দিলেই ব্যয় কমে যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Link copied!