টুইন টাওয়ার হামলা নিয়ে গুজব আর বাস্তবতা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ১১:৩৩ পিএম

টুইন টাওয়ার হামলা নিয়ে গুজব আর বাস্তবতা

৯/১১ এর ভয়াবহ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ২০টি বছর। এত বছর পরও ওই ঘটনার সত্যাসত্য এবং রহস্যের কুল কিনারা করতে পারেনি বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও। ফলে এখনও মানুষ বিশ্বাস করছে কন্সপিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে।

নাইন ইলেভেন (৯/১১) নিয়ে প্রথম কন্সপিরেসি থিওরিটি চালু হয় হামলার কয়েক ঘন্টার মাথায়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য অনলাইন মাধ্যম আসায় এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়তে থাকে। তবে যুক্তরাষ্টের প্রশাসন এবং ৯/১১ এর ঘটনার তদন্তকারী সংস্থাগুলো কোন প্রকার ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেছে। বিভিন্ন আন্দোলনকারী গোষ্ঠীর দাবি মার্কিন প্রশাসন প্রকৃত তথ্য গোপন করেছে।

হামলার অল্পক্ষণের মধ্যে নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার থেকে যেভাবে পাকিয়ে উঠেছিল ধোঁয়ার কুণ্ডলী।ছবি: সংগৃহীত

চাউর হওয়া এমনই কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একটি হলো: আমেরিকার অভ্যন্তরের একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী ভয়াবহ ওই হামলার জন্য দায়ী। এবং এই তত্ত্বের প্রবক্তারা একটি টিভি সিরিজের খণ্ডিত ক্লিপকে তাদের বক্তব্যের সাপেক্ষে প্রমাণ হিসেবেও হাজির করে।

আবার একদল মানুষ বিশ্বাস করেন, মার্কিন প্রশাসন আগে থেকেই হামলাকারী এবং হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জানতো। কিন্তু তারপরও তারা হামলাকারীদের হামলা করার সুযোগ দিয়েছে।

উল্লিখিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সাথে সাথে যুক্ত হয়েছে অতি সম্প্রতি জেগে ওঠা একটি অনলাইন আন্দোলন। এই আন্দোলনের সাথে যুক্তরা মনে করেন, ৯/১১ এর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর একদল ‘এলিট’ বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা খর্ব করে একটি অথরিটারিয়ান বা কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৯/১১ এর মতো ভীতিকর হামলা সংঘটিত করিয়েছে।

এই হামলা ছিল শতাব্দীর অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ একটি হামলা। ছবি: সংগৃহীত

এছাড়াও প্রচলিত আরেকটি দাবি হলো, ‘জেট ফুয়েল কখনো বিল্ডিংয়ের স্টিলের তৈরি বিম গলানোর জন্য উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি করতে পারে না। সুতরাং, এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে, টুইন টাওয়ার বিস্ফোরকের সাহায্যে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু, টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কারণ খুঁজতে করা তদন্তের ফলাফল থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, টুইন টাওয়ারে ধ্বংস হওয়া বিমানটি বিল্ডিংদুটোর মূল কাঠামোর সাপোর্ট কলামকে স্থানচ্যুত করে দেয়। যার ফলে বিল্ডিংদুটোর ফায়ার-প্রুফ ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে যায়। এবং কোন কোন স্থানে সহজে আগুন ধরে যায় এমন দ্রব্যাদি থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং কোন কোন স্থানে তাপমাত্রা ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। যা স্টিলের বিমগুলোকে গলে যেতে সহায়তা করে। ফলে বিল্ডিংদুটোও ধ্বসে পড়ে।

টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময় আশেপাশের আরও সাতটি বড় ভবন ধ্বসে পড়ায় ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো আরো ডালপালা মেলে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব গত বছরের ৯/১১ এর ১৯তম বার্ষিকের সময় বেশ চাউর হয় সামাজিক মাধ্যমে। সেটি হলো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্টের অফিস ছিল এমন একটি বিল্ডিং কোন হামলা ছাড়াই গুড়িয়ে যায়। তাহলে কি কারণে সেই ভবন ভেঙে পড়লো?

এই ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়। ছবি: সংগৃহীত

সেই জবাবও পাওয়া গেছে ২০০৮ সালে প্রকাশিত তদন্তের ফলাফল থেকে। প্রায় ৩ বছর ধরে তদন্ত-গবেষণা করে পাওয়া যায় যে, সেই ভবনে টুইন টাওয়ারের উত্তর টাওয়ার থেকে ‍ছিটকে পড়া আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। যা প্রায় ৭ ঘন্টা ধরে জ্বলে ছিল। ফলে সিআইএর অফিস থাকা বিল্ডিংটিও ধ্বসে যায়।  

আরেকটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হলো, যখন টুইন টাওয়ার জ্বলছিলো তখন বিবিসির নিউইয়র্ক স্টুডিও থেকে জেন স্ট্যানলি লাইভ রিপোর্ট করছিলেন। এই ছবিটি পরে রয়টার্স এবং সিএনএন তাদের সংবাদে ব্যবহার করে। ফলে, দ্রুতই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই ছবিকে কেন্দ্র করে, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রদানকারীরা দাবি করতে থাকে যে, ৯/১১ এর হামলার সাথে বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলোও জড়িত।

প্রকৃতপক্ষে টুইন টাওয়ার এর অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বিবিসির স্টুডিওর বাইরে যে ধোয়া দেখা যাচ্ছিল তা আসলে টুইন টাওয়ারের পাশে থাকা ধ্বংস হওয়া সাতটি আকাশচুম্বী ভবন।

আবার একদল অনলাইন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রদানকারীর মতে, পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক মার্কিন সরকার পেন্টাগনে মিসাইল হামলা করেছিল। আর পেন্টাগনে হামলার যে ছিদ্র দেখা যায় তা অনেক ছোট এবং বিমান হামলা হলে এত ছোট ছিদ্র বা গর্ত হতো না, এর চেয়ে বড় হতো। কিন্তু একদল মার্কিন ইঞ্জিনিায়ার বলছেন, পেন্টাগনে হামলার কারণে তৈরি হওয়া গর্ত অত ছোট হওয়ার কারণ হলো যখন বিমানটি পেন্টাগনে আঘাত হানছিল তখন বিমানটির একটি পাখা মাটিতে এবং অপর পাখাটি পেন্টাগন বিল্ডিংয়ে আঘাত হানে।

আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে এই ঘটনায় দায়ী করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

৯/১১ এর ঘটনায় আরেকটি বড় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হলো, সেদিনের হামলায় কোন ইহুদী মারা যায়নি। বলা হয়, টুইন টাওয়া কাজ করা চার হাজার ইহুদী কর্মীর প্রত্যেকেই সেদিন কাজে অনুপস্থিত ছিলেন।

অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, মার্কিন মিত্র ইসরায়েল এই হামলা করিয়েছিল। দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করিয়ে আমেরিকাকে বলির পাঁঠা বানিয়ে তার আঞ্চলিক শত্রুদের শায়েস্তা করতে চেয়েছিল।

কিন্তু ৯/১১ এর ঘটনায় ২০৭১ জন নিহতের মধ্যে কমপক্ষে ১১৯ জন ছিলেন নিশ্চিত ইহুদী এবং পরে নিহতদের মধ্যে আরো ৭২ জনকে পাওয়া যায় যারা ইহুদী ধর্ম অনুসরণ করতেন। এই সংখ্যাটা নিহতদের মোট সংখ্যার ৯.২ শতাংশ। টুইন টাওয়ার ছাড়াও সেদিন অন্যান্য বিল্ডিংয়ে সবমিলেয়ে অন্তত ৪০০ ইহুদী নিহত হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের প্রতীক ওই টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনার বিষয়ে এমন আরো একাধিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত আছে। ঘটনার ২০ বছর পরও নানা তত্ত্ব এখনও বেরিয়ে আসছে। তবে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের স্বপক্ষে জোরালো কোন প্রমাণ মেলে না।

সূত্র: বিবিসি অবলম্বনে।

Link copied!