তুরস্ক সহায়তা পেলেও উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ সঙ্কটে সিরিয়া

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৭:০৭ পিএম

তুরস্ক সহায়তা পেলেও উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ সঙ্কটে সিরিয়া

শক্তিশালী ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গেছে তুরস্ক-সিরিয়ার বেশ কয়েকটি প্রদেশ। উদ্ধার কাজ চলছে পুরোদমে। মৃত্যুমিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মরদেহ। এ পর্যন্ত দুই দেশে মৃত্যুসংখ্যা ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত দুই দেশের জনগণের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে অনেকে দেশ। তবে ত্রাণের সিংহ ভাগই পেয়েছে তুরস্ক। অন্যদিকে, ত্রাণের অভাবে চরম সঙ্কটে রয়েছেন উত্তর সিরিয়ার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। ভূমিকম্প আঘাত হানার চার দিন পরও পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি সেখানে।

গত সোমবার ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্কে এ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টি দেশ উদ্ধারকাজে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এরই মধ্যে ত্রাণ, মেডিকেল সাপোর্ট নিয়ে ওখানে গিয়ে কার্যক্রমও শুরু করেছে অনেক দেশ। তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।

সিরিয়ার অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় ৪০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত আলেপ্পোতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার সবশেষ লাইভ আপডেট তথ্য অনুযায়ি (শনিবার বেলা ১টা পর্যন্ত, বাংলাদেশ সময়) দেশটিতে ৩ হা্জার ৫৫৩ জনের মরদেহ উদ্ধার  করা হয়েছে। এখনও চাঁপ পড়ে আছে অনেকে। হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সামগ্রি শেষ হয়ে আসছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর সিরিয়ার একটি হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার মোহাম্মদ হাসাউন জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর এখন তাদের কাছে যে চিকিৎসা সামগ্রী রয়েছে তা দেশের উত্তরাঞ্চলের ২০ শতাংশ মানুষের চাহিদাও পূরণ হবে না।

ভারী ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সিরিয়ার আলেপ্পো অঞ্চলে উদ্ধারকাজ থমকে আছে। নেই সেরকম কোনো ত্রাণ তৎপরতাও। সিরিয়ার সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের উদ্ধারকারী বাহিনী হোয়াইট হেলমেট আলেপ্পোতে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্বে আছে। তবে তাদের সেই কর্মকাণ্ড খুবই অপ্রতুল।

হোয়াইট হেলমেটের কর্মকর্তা ওবাদাহ আলওয়ান বিবিসিকে জানিয়েছেন, একদিকে ভারী ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার তৎপরতা ঠিকমতো চালাতে পারছেন না তারা, অন্যদিকে ত্রাণসামগ্রীর সরবরাহ না থাকায় আহতদের চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা প্রদানও গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বন্ধুরাষ্ট্র সিরিয়ায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে মেডিকেল সাপোর্ট, উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণ পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশও সিরিয়ার জণগণের এই দুঃসময়ে পাশে থেকেছে। শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি)  সরকারের পক্ষ থেকে সিরিয়ায় ১১ টন ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পণ্য পরিবহনকারী একটি বিমানে করে এ সামগ্রী পাঠানো হয়। বিমানযোগে ত্রাণ সহায়তার জন্য বড় তাঁবু, ছোট তাঁবু, কম্বল, সোয়েটার, শুকনা খাবার এবং ওষুধ পাঠানো হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ওই নিষেধাজ্ঞা এখনও কার্যকর রয়েছে। কার্যকর থাকা নিষেধাজ্ঞাগুলোর একটি হলো-সিরিয়ার বিমান ও সমুদ্রবন্দরে বিদেশি উড়োজাহাজ ও জাহাজ প্রবেশ বা নোঙর করতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়ায় ত্রাণ পাঠাতে অনেক দেশের ইচ্ছে থাকলেও পারছে না। বুধবার অবশ্য সিরিয়াতে ৬ ট্রাকভর্তি ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে জাতিসংঘ। ভূমিকম্পের পর এটি ছিল সিরিয়াতে প্রথম কোনো বিদেশি ত্রাণের সরবরাহ। তবে তা চিল, চাহিদার তুলনায় খুবই অল্প।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্টকে সহায়তা করছে। সংস্থাটি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ভূমিকম্পের পর সিরিয়াকে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আরবীয় বর্ণবৈষম্য বিরোধী কমিশন ওয়াশিংটনকে দ্রুত দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানালেও বাইডেন প্রশাসন বলেছে, তারা সরাসরি সিরীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের এহেন সিদ্ধান্তের কটৈার সমালোচনা করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ভৌগোলিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে দ্রুত সিরিয়ার ওপর থেকে একতরফা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, যাতে মানবিক সহায়তা কাজে সুবিধা দেয়া যায়।

বেইজিংয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মাও নিং আরও বলেন, বহু বছর যুদ্ধের পর ভূমিকম্পের ফলে দেশটি গুরুতর মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘসময় ধরে সিরিয়া সংকটে সামরিক হস্তক্ষেপ করে আসছে। এতে ব্যাপক সিরীয় মানুষ হতাহত হয়েছে; মানুষের জীবনের মৌলিক নিশ্চয়তা নষ্ট হয়েছে।

Link copied!