তুরস্কে রান অফ নির্বাচন: এরদোগান-কিলিচদারোগ্লুর ভাগ্য নির্ধারণ আজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ২৮, ২০২৩, ০৩:২৯ পিএম

তুরস্কে রান অফ নির্বাচন: এরদোগান-কিলিচদারোগ্লুর ভাগ্য নির্ধারণ আজ

তুরস্কে গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় রবিবার (২৮ মে) অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহাসিক রান অফ নির্বাচন। এই  নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে রিসেপ তায়িফ এরদোয়ান ও তার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি কামাল কিলিচদারোগ্লুর। প্রথম ধাপের নির্বাচনে এরদোগান তার ২০ বছরের শাসনামলে প্রথমবারের মতো সরাসরি বিজয় থেকে বঞ্চিত হন। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ থেকে খুব সামান্য পেছনে ছিলেন এরদোগান। পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট।

তাই এ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা হিসেবে-নিকেষ। নিজের টানা শাসনামলের তৃতীয় দশকে পা রাখার অপেক্ষায় রয়েছেন ৬৯ বছর বয়সি এরদোগান। জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছেনও তিনি। রান অফ নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু জরিপের ফলাফলও তাই বলে। এর মধ্যে ইউরেশিয়া গ্রুপ কনসালটেন্সি নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছে, রানঅফ নির্বাচনে এরদোগানের জয়ের সম্ভাবনা ৮০ ভাগ। এই নির্বাচনে উতরে গেলে তার ইসলাম-কেন্দ্রিক শাসন ২০২৮ সাল পর্যন্ত বর্ধিত হবে।

তুরস্কের এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দীর্ঘ দুই দশক ধরে তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি অনুপস্থিত। দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অভিযোগ এনেছেন অনেকে।গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণসহ বিরোধী মত দমনের অভিযোগও রয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতো তার বিরুদ্ধে প্রচার প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসীরা চাইছেন কামাল কিলিচদারোগ্লুর জোট ক্ষমতায়  ফিরে আসুক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বও চাইছে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতায় আসুক। সৌদি আরবের সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা ইরান, সিরিয়া, কাতারসহ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় এরদোগানের ভূমিকা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে এতে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একচেটিয়া প্রভাবে ভাগ বসিয়েছে তুরস্ক। তাই তারা এরদোগানবিরোধী শিবিরকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়।

তবে পশ্চিমাদের এই আশা-নিরাশায় পরিণত হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। দেশটির নতুন প্রজন্মের ‘রাজা’ সিনান ওগান সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাত মিলিয়েছেন এরদোগানের সাথে। শত্রুতা ভুলে বন্ধু বনে যাওয়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই কিং মেকার প্রথম দফার নির্বাচনে পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। প্রথম দফায় যারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন সেই ভোটারদের দ্বিতীয় দফায় এরদোগানকে সমর্থন করার আহবান জানান ওগান।

নির্বাচনে এরদোগানের বিরুদ্ধে লড়ছে ছয়টি বিরোধী দলের জোট ন্যাশনাল এলায়েন্স। নেতৃত্বে রয়েছেন আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)।

ক্ষমতায় যেতে দলের নীতিতেও পরিবর্তন এনেছেন কামাল কিলিকদারোগ্লু। সিএইচপি ক্ষমতায় থাকাকালে এক সময় তুরস্কে আজান নিষিদ্ধ ছিল। দলটি এখন সেই নীতি থেকে সরে আসছে। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এই আমলা ডানপন্থী দলগুলোর সাথে জোট করেছেন। ‘তুরস্কের গান্ধী’ খ্যাত এই নেতা এখন স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পর্দা করার অধিকার সমর্থন করেছেন।

এরদোগানবিরোধীদের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষ নেতা কামাল কিলিকদারোগ্লু। প্রথম দফার নির্বাচনে কুর্দি বংশোদ্ভূত অবসরপ্রাপ্ত এই আমলা প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। জাতিগত বাধা এবং মিডিয়া ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর এরদোগান প্রশাসনের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণকে ডিঙিয়েই এই পারফরম্যন্স দেখান ৭৪ বছর বয়সি এই রাজনীতিক।

এছাড়া, গোঁড়া অর্থনৈতিক নীতি এবং সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থনাীতিবিদ কিলিচদারোগ্লু। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ভিন্নমত দমন না করা, মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। এসব কারণে কিলিচদারোগ্লু বিজয়ের মধ্য দিয়ে তুরস্কে এরদোগান যুগ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

Link copied!