পাকিস্তানে মসজিদ কেন বারবার হামলার টার্গেটে?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০৪:৩২ পিএম

পাকিস্তানে মসজিদ কেন বারবার হামলার টার্গেটে?

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে আইএসআইয়ের সমর্থিত জঙ্গিরা এক ভয়াবহ হামলা চালায়। তাজমহল হোটেলের অতিথিরাই ছিলেন সেদিনের হামলার টার্গেট। ওই হামলায় ৬ আমেরিকানসহ ১৬টি দেশের মোট ১৬৬ জন নিহত হন।

আদালতে মুম্বাই হামলায় অভিযুক্ত ছয় জঙ্গির বিরুদ্ধে শক্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ হাজির করেনি পাকিস্তানি কর্মকর্তারা। ফলে আলোচিত ওই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সাইদের নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়ার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আর লাহোর হাইকোর্টও তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছে। ফলে মুম্বাই হামলার মূল কুশিলবরা লাহোর হাইকোর্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে আবারও প্রমাণ হয়েছিল, পাকিস্তান জঙ্গিদের এখনও মদদ জুগিয়েই যাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। তবে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। চার দশক ধরে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের পালে হাওয়া দিয়ে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান। দেশটির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণেও ধর্মীয় জঙ্গিদের নির্মূলের প্রভাব বেড়ে গেছে। পাকিস্তানের সামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতাও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে নির্মূল করাকে সমর্থণ করে না। 

দেশটিতে বারবার মসজিদে বারবার আত্মঘাতী হামলার বড় একটি কারণ হচ্ছে এই জঙ্গিবাদের চাষাবাদ। ভিন্ন বিশ্বাসী ও অমুসলিমদের প্রতি বিরাগভাজনপূর্ণ মনোভাব পাকিস্তানি সমাজ কাঠামোতে বিষের মতো ছোবল মারছে। ধর্মীয় কুসংস্কার এবং উগ্রতা, রাজনৈতিক ইসলামের প্রাধান্য, দলগুলির জঙ্গি-বান্ধব নীতির কারণে পাকিস্তানে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এতে দাবার গুটি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মসজিদে হামলার মতো ঘটনা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে দেশটিতে।

অভিযোগ আছে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন পেয়ে যাচ্ছে। বহুকাল ধরে জিহাদের নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদদ জুগিয়ে চলেছে দেশটির সেনাবাহিনী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভেতরের একটি অংশ জঙ্গিদের হয়ে কাজ করছে বলেই সামরিক এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস। বিশেষ করে ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের একটি সামরিক আবাসিক এলাকাতে বছরের পর বছর নিরাপদে বসবাস করার পর সেই বিশ্বাস আরও পোক্ত হয়।

এর আগে, পেশোয়ারের স্কুলে হামলার সময়ও একই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। মাত্র সাতজন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) জঙ্গি কীভাবে সেনাবাহিনীর সকল নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতে সেনাবাহিনীরই পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা করতে পারে? কীভাবে বোমা এবং স্নাইপার রাইফেলসহ নিরাপত্তা চৌকিগুলি অতিক্রম করে স্কুলে আক্রমণ করল তাঁরা? স্কুলের পরীক্ষার সময়সূচি জঙ্গিরা কীভাবে জানল? এরকম বহু কারণে সেনাবাহিনীর দিকে সন্দেহের অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন অনেকে।

সেনাবাহিনীর ভেতরকার সহযোগিতা ছাড়া কি এটি সম্ভব? গণমাধ্যমে এ তথ্যও প্রকাশিত হয়েছিল যে, গোয়েন্দারা আগেই নাকি জঙ্গি হামলার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন। 

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের দ্বৈত চরিত্রের কারণেই জঙ্গিবাদের ফলন বাড়ছে পাকিস্তানে। ভুগছেন দেশটির সাধারন মানুষজন। বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয়ভাবে জঙ্গীবাদের মদদদান বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে এই সংকট চলতেই থাকবে। বেঘোরে মারা পড়বে নীরিহ মানুষজন।

Link copied!