জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০১:১০ এএম
বিক্ষোভ আর আন্দোলনে উত্তাল রাজধানী তেলআবিবসহ গোটা ইসরায়েল। বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের নামে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার পায়তারা করছে-এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন দেশটির সাধারণ জনগণও।
বৃহস্পতিবার রাজধানী তেলআবিবসহ বেশ কয়েকটি শহরের রাজপথে বিক্ষোভে অংশ নেন কয়েক লাখ মানুষ। তাদের সবারই একই অভিযোগ-ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে উগ্র ডানপন্থি এই সরকার। মন্ত্রিসভায় রয়েছেন অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী এবং আলট্রা-অর্থোডক্সরা। তারা দেশের গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার জন্য চরম হুমকি।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কেন এই বিক্ষোভ?
সম্প্রতি নির্বাচনে ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করার পর বিচার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনার নামে গণতন্ত্রকে ধ্বংসের পায়তারা করছে বর্তমান সরকার। এরই প্রতিবাদে মাঠে নামেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হাজারো নেতাকর্মী। তাদের সাথে যোগ দেন দেশটির সাধারণ জনগণ।
ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, 'গণতস্ত্র হুমকির মুখে' ও ' ফ্যাসিস্ট ও বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ'— এসব স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের অভিযোগ, ইসরাইলের ৭৪ বছরের ইতিহাসে এবারের সরকার সবচেয়ে উগ্রপন্থি। এই সরকারের কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ নয় বলেও তারা জানান। বিক্ষোভ চলাকালে অনেকের হাতে ছিল ব্যানার। তাতে লেখা ছিল- 'আমাদের সন্তানরা একজন স্বৈরশাসকের অধীনে বসবাস করবে না।'
চলমান এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদও। সদ্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জানান, “দেশ রক্ষার জন্য এই বিক্ষোভ। জনগণ তাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। সরকারের উদ্যোগে সব বয়সী প্রজন্মই উদ্বিগ্ন।”
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এমনিতেই দুর্নীতির বিচার চলমান রয়েছে। আগের দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম এখনও চলছে। একারণে বিচারবিভাগকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না বিক্ষোভকারীরা। তাদের যুক্তি, নিজের দুর্নীতির মামলা থেকে রক্ষা পেতে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে চাইছেন। আর এটা করতে পারলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে রক্ষা পাবেন। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ হয়ে যাবে।
বিরোধী দলের আরও একটি অভিযোগ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের নিয়ে গঠিত তাঁর সরকার পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনের জবর-দখল করা জমিতে আরও বেশ কয়েকটি অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এতে করে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তাদের নিরাপত্তা বিরাট হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে বলে মনে করছেন সরকারবিরোধীরা।
আরও একটি কারণে বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার কারণে সম্প্রতি নেতানিয়াহু সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ওই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহবান জানিয়েছেন আদালত। তবে এটা না করায় প্রতিবাদ বিক্ষোভের সঙ্গে যোগ হয়েছে এই আইনি চাপ। এতে দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং আদালতের ক্ষমতা নিয়ে গভীর এক বিভক্তি দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা।
নেতানিয়াহু সরকার কি বলছে?
এদিকে, বিক্ষোভ-আন্দোলন চললেও বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বর্তমান সরকার। নেতানিয়াহু প্রশাসন বলছে, বিচারক এবং সরকারি আইনি উপদেষ্টাদের অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এতে আইন প্রণয়ন এবং সুশাসনের ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এজন্য আইন পরিবর্তন করা দরকার।