জুলাই ১৮, ২০২৩, ০৪:১৭ পিএম
শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির প্রধান মনে করেন, এর ফলে বিশ্বের গরীব দেশগুলো আরও গরীব হবে এবং গরীব মানুষের জীবনযাত্রা আরও নিচের দিকে নেমে যাবে। একই কারণে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)।
সিএনএন ও সিবিএসসহ একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অনাহারে রয়েছে। আরও বহু মানুষ জীবনযাত্রা ব্যয় সংকটে আছে। এমতাবস্থায় শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট চরম আকারে দেখা দিতে পারে।
ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গম উৎপাদনকারী দেশ। তাই ইউক্রেনকে ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’ বলা হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে। জাহাজভর্তি এসব খাদ্যশস্য কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। যুদ্ধ শুরুর পরই কৃষ্ণ সাগরসহ ইউক্রেনের বন্দরগুলো রুশ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলে বেকায়দায় পড়ে ইউক্রেন সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্যশস্য সরবরাহের অন্যতম রুট কৃষ্ণ সাগর নিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য আর সম্ভব নয় ইউক্রেনের।
এমতাবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেইনের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সব জায়গাতেই মানুষ ভুক্তভোগী হবে।
জাতিসংঘ প্রধান আরও বলেন, বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে আছে। আরও বহু মানুষ জীবনযাত্রা ব্যয় সংকটে আছে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের ‘মূল্য দেবে’ এইসব মানুষেরা।
সোমবার শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আর তা না বাড়ানোর বিষয়টি স্পষ্ট করে রাশিয়া জানিয়ে দেওয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন গুতেরেস।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা সোমবার রাতেই। বিবিসি জানায়, এ মেয়াদ আর না বাড়ার সিদ্ধান্তে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের (ডব্লিউটিও) প্রধানও।
এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেন, “কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাবার, গবাদি পশু খাদ্য এবং সার বাণিজ্য বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি দুঃখের সঙ্গেই বলছি যে, গরিব মানুষেরা আর গরিব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে।”
কৃষ্ণ সাগর শস্য চু্ক্তি ভেঙে পড়ার প্রতিক্রিয়ায় একই কথা বিবিসি-কে বলেছেন খাদ্য বাণিজ্য দেখভালকারী আন্তর্জাতিক শস্য পরিষদের প্রধান কর্মকর্তা।
রাশিয়ার শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, গমের দাম বেড়ে যাওয়া। আর এই গমের দাম বেড়ে গেলে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মোটেও ভাল হবে না। বেশি দাম দিয়ে কেনার মতো অর্থ তাদের থাকবে না।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হলে দেশটি থেকে শস্য রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। রুশ বাহিনী প্রথমেই কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেইনের বন্দরগুলোর দখল নিলে কিয়েভ কোনো পণ্য রপ্তানি করতে পারেনি।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেইন থেকে পণ্যের যোগান বন্ধ হয়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে।
এর ফলে, শস্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশ্বব্যাপী দেখা যায় খাদ্য সংকট। অন্যদিকে, ইউক্রেইনের গুদামগুলোতে টন টন শস্য পড়ে নষ্ট হতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেইন থেকে শস্য রপ্তানির বিষয়ে তিন পক্ষের মধ্যে গত বছর ওই চুক্তি হয়। শস্যচুক্তিটি হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেইন প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টন শস্য এবং অন্যান্য খাবার পরিবহন করেছে। তবে সোমবার রাশিয়ার শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় আবারও বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট প্রবল আকার ধারণ করবে-এমন সতর্কবার্তা দিলো জাতিসংঘ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।