আজ ২৪ আগস্ট, ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৯১ সালে মস্কোর শাসন থেকে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করেন সোভিয়েত ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রের নেতা লিওনার্দ ক্রাভচাক। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের ৩১তম স্বাধীনতা দিবসেও ইউক্রেনকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে সেই রাশিয়ার বিরুদ্ধেই।
প্রতি বছর ২৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করলেও এবারে রাশিয়ার অব্যাহত হামলার প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা দিবসের সব ধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করেছে দেশটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, একই দিনে (২৪ আগস্ট) রাশিয়ার ইউক্রেন হামলাও ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে। এ অবস্থায় রুশ হামলা আরো জোরদার হতে পারে- এমন আশঙ্কায় রাজধানী কিয়েভে স্বাধীনতা দিবসের সভা, সমাবেশ ও উদযাপন অনুষ্ঠান না করার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। আর রুশ হামলার কারণে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কয়েকদিন আগে থেকেই সতর্ক করছেন, স্বাধীনতা দিবসে বড় ও কুৎসিত হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। তাই সবাইকে এ থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলীয় খারসন শহরে রাশিয়ার সৈন্যদের বিরুদ্ধে ভারী লড়াই করে যাচ্ছে ইউক্রেনের সৈন্যরা। অন্যদিকে রবিবার রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ক্রাইমিয়ায় একটি ইউক্রেনিয়ান ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
এই যুদ্ধে এর মধ্যেই হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে, ইউক্রেনের প্রায় দেড় কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অসংখ্য শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। ইউক্রেনের এই যুদ্ধ প্রভাব ফেলেছে বিশ্বের অর্থনীতিতেও।
ছয় মাসব্যাপী হামলায় এ পর্যন্ত ইউক্রেনের সাড়ে পাঁচ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। আর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের নয় হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। এ সংঘাতে দেশ ছেড়েছে প্রায় এক কোটি ইউক্রেনীয়। বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরো অনেকেই। এছাড়া রুশ হামলায় ইউক্রেনের বেশ কিছু শহর একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
রাশিয়ার কত সৈন্য নিহত হয়েছে, তা তারা জানায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ধারণা করেন, এ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় ১৫ হাজার সামরিক সদস্য নিহত হয়েছে। তারপরও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ
এদিকে,ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় পারমানবিক কেন্দ্র নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদেনে বলা হয়, জাপোরিঝজিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে একে অপরকে দোষারোপ করেছে মস্কো ও কিয়েভ। গত মার্চ মাস থেকে রাশিয়া ওই কেন্দ্র দখলে নেয়ার পর সেটার ওপর অব্যাহতভাবে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়া অভিযোগ করেছে, ইউক্রেনের সৈন্যরা কেন্দ্রটিকে লক্ষ্য করে গোলা ছুঁড়ছে, যার ফলে পুরো অঞ্চল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
জাতিসংঘে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আহ্বান করেছেন, রাশিয়ার সৈন্যদের ওই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত, যাতে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার সদস্যরা সেখানে পরিদর্শন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে, যুদ্ধের সমাপ্তির টানার মাধ্যমে রাশিয়া সহজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোকে যুদ্ধের আওতার বাইরে রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার ৬০টি দেশের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যদের নিয়ে ক্রাইমিয়া বিষয়ক একটি অনলাইন সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি ঘোষণা দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে তারা পুরো উপদ্বীপ থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে বিতাড়িত করবেন। সেজন্য আগে অন্য কোন দেশের সঙ্গে তারা পরামর্শও করবেন না।
রাশিয়ার কত সৈন্য নিহত হয়েছে, তা তারা জানায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ধারণা করেন, এ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় ১৫ হাজার সামরিক সদস্য নিহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করা নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় মস্কো-কিয়েভের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো।
তবে ওই কৌশল কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এর দুদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে।