আগস্ট ১৫, ২০২৪, ০৯:৪৫ এএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থার উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩’র ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারায় এই অভিযোগের বিচার করা যাবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাদীপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম এ বিষয়ে আজ সাংবাদিকদের বলেন, “গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এক্ষেত্রে একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে এবং ঘটনার সময়ের পত্রিকা সংগ্রহ করে পর্যালোচনা শুরু করেছেন।”
পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গতকাল দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন: সিএনজিচালক শাহাবুদ্দিনকে হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে এই আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কো-অর্ডিনেটর বরাবর এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ রেজিস্ট্রারভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়।
আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবে। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার থেকে র্যাবের গুলিতে মাদ্রাসা ছাত্র ইমন নিহত: শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
অপরাধের ধরণে বলা হয়েছে, আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা দেশীয় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ ও নিরস্ত্র ছাত্র জনতাদের হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠনের অপরাধ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য (এমপি), সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজিপি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ও আরও কয়েকজন র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ অজ্ঞতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে বাদী ও অন্যান্য সাক্ষীদের পাশাপাশি গত ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ডকুমেন্টস হিসেবে দাখিল করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।