কাশিমপুর কারাগার: যার নির্দেশে হাজতি নির্যাতন তিনিই তদন্ত কমিটির প্রধান!

আহম্মেদ মুন্নী

জুন ২৬, ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম

কাশিমপুর কারাগার: যার নির্দেশে হাজতি নির্যাতন তিনিই তদন্ত কমিটির প্রধান!

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রুনা লায়লা নামের এক হাজতিকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটির প্রধান করা হয়েছে যার নির্দেশে নির্যাতন চালানো হয় সেই জেলার ফারহানা আক্তারকে! এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিত হাজতি রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম।

আব্দুল করিম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, জেলার ফারহানা নিজে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে নির্দেশ দিয়ে অভিযুক্তদের মাধ্যমে আমার বোনকে বেদম মারধর করেছেন। এ জন্য আমি গাজিপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের কাছেও লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি। তাহলে সেই অভিযুক্তকেই কেন তদন্ত কমিটির প্রধান করা হলো? আমি এই তদন্ত কমিটি মানি না। আমি বিষয়টি নিয়ে আবারও জেলা প্রশাসকের কাছে যাবো।

কাশিমপুর কারাগারে নির্যাতনের ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তার প্রধান জেলার ফারহানা আক্তার ছাড়াও রয়েছেন সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর শাহানুর রহমান ও মহিলা কারারক্ষী ফারজানা আক্তার।

আরও পড়ুন: হাজতিরা হাজতিদের পেটান কাশিমপুর কারাগারে!

হাজতির স্বজনের অভিযোগ মতে আপনি নির্যাতনের নির্দেশ দাতা, তাহলে কীভাবে সেই ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন— এমন প্রশ্নে ফারহানা আক্তার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এটা আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ। আমাকে তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আমি সুপারকে সেটা জমাও দিয়েছি। আমাকে কেন করা হলো, সেটি আমি জানি না।’

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আসলে এই চেয়ারের যোগ্য নই আমি। আমাকে এই চেয়ারে দেওয়াই ঠিক হয়নি। এজন্য আসলে বিপদটা হইছে। ছোট ছোট কারাগারে চাকুরি করেছি, শান্তিতে ছিলাম। আমি বদলির আবেদন করেছি। চলে যাব এখান থেকে।

তদন্ত কমিটির বিষয়ে সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান বলেন, একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে তিন সদস্যের। সেখানে জেলার ফারহানাকে প্রধান করা হয়েছে। অভিযোগকারীর মতে জেলার ফারহানা নিজেই হাজতি নির্যাতনে যুক্ত, তাহলে কীভাবে তিনি সেই ঘটনার তদন্ত কমিটির হন? এমন প্রশ্নে জেল সুপার বলেন, আসলে একটা কারাগারে একজন জেল সুপার থাকেন ও একজন জেলার থাকেন। এক্ষেত্রে ডেপুটি জেলার থাকে দুজন। তবে আমার এখানের একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন আর অপরজন ডেপুটি জেলার তায়েবা। তিনিও অভিযুক্ত। আমাকে তো একজনকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিতে হবে।

আরও পড়ুন: ওরা আমাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলতে চাইছিল: হাজতি রুনা

এ বিষয়ে নির্যাতিত হাজতি রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম বলেন, আজ ২৬ জুন আমার বোনকে কোর্টে আনার কথা থাকলেও তাকে হাজির করা হয়নি। কারণ দেখিয়ে বলা হয়েছে, আমার বোন অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। তাহলে এমন কি হলো যে তাকে হাসপাতাল ভর্তি করতে হলো? এতেই তো প্রমাণ হয় আমার বোনকে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে।

জেলার ফারহানাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিনি যে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আদেশ করে মারধর করিয়েছেন, সেটা জানতে পেরেছি। জেলারের আদেশ ছাড়া জেলে একটা পাতাও নড়া সম্ভব না। আমি খুব শ্রীঘ্রই এবিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে জানাব।

প্রসঙ্গত, ‘হাজতিরা হাজতিদের পেটান কাশিমপুর কারাগারে!’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে। এরপরই কারা কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন।

 

Link copied!