আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই: প্রধানমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৯, ২০২৩, ০২:৪৬ এএম

আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই: প্রধানমন্ত্রী

ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে, নানারকম আন্দোলনের হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।’

শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে এ কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই—জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। বরং খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে ভোট চুরি করেছিল বলেই বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল। এটা তাদের মনে রাখা উচিত।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ওরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, বিএনপি-জামায়াত মানেই হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী।

সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ এই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা হলো বাস্তবতা।

৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। কিন্তু তাদের হত্যার বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার আমার ছিল না। কারণ, জিয়া ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ওই খুনিদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসেছি এমন একটা সময় যখন ওই খুনিদের দল, যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়। বারংবার আমার ওপর আক্রমণ। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আমার ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল। আপনাদের মনে আছে, ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী মারা গেছেন। এরপরও বারবার বাধা পেলেও নিজের জীবনের মায়া করিনি। একটা কথাই শুধু ভেবেছি বাংলাদেশের মানুষ, যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং জীবনটাও দিয়ে গেছেন। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করব। এদেশের কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না, ভূমিহীন থাকবে না, রোগে কষ্ট পাবে না। সেজন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার সব রকমের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কাজেই আমার একটাই কাজ—দেশের মানুষের কল্যাণ করা। আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। শুধু আপনাদের দোয়া চাই।

নৌকায় আবার ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে কর্ণফুলী টানেল, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন। কাজেই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা আমাদের আবারো সেবা করার সুযোগ দেবেন কি-না, হাত তুলে ওয়াদা করুন।

জনগণ এ সময় সমস্বরে চিৎকার করে দুই হাত তুলে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সরকার প্রধান সবার দোয়া চেয়ে বলেন, ‘দোয়া করবেন এই উন্নয়নের ধারা যেন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে। ঐ লুটেরা সন্ত্রাসীদের হাতে যেন দেশ না পড়ে।’

এর আগে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলীর উত্তর তীরে পতেঙ্গায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর ফলক উন্মোচন করেন এবং টানেলের ভেতর দিয়ে প্রথম যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি টানেল অতিক্রম করে নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় তাঁর মোটরযানের টোল পরিশোধ করেন। পরে কেইপিজেড মাঠে সমাবেশে যোগ দেন। ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টানেল সোমবার সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এছাড়াও প্রথম পানির নিচের সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ডাক বিভাগ প্রকাশিত একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম, বিশেষ সীলমোহর এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। 

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রমুখ।

চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। সেটি চীনের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন এবং পড়ে শোনান। সেতু বিভাগের সচিব অনুবাদটি পাঠ করেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং বার্তায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার সাক্ষর বহনকারী একটি প্রকল্প এবং দুটি দেশের মধ্যে পারষ্পরিক লাভজনক সহযোগিতার আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

এই টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে চট্টগ্রামবাসীর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে- উল্লেখ করে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চট্টগ্রামবাসীর জন্য তার উপহার বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

পলি জমে কর্ণফুলীর তলদেশ যেন ভরাট না হয়ে যায়, সেজন্যই সরকার টানেল করার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগ ও আমাদের আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিরাট ভূমিকা রাখবে। এখন আর এখান থেকে কক্সবাজার যেতে বেশি সময় লাগবে না। ঢাকা থেকে যাত্রার সময় চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে যাওয়া যাবে। শহরে ঢুকে আর যানজটে পড়তে হবে না। তাছাড়া এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে আমরা সংযুক্ত হব যা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এত বড় টানেল এটা এই প্রথম। এজন্য তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংকে ধন্যবাদ জানান। কেননা চীন সফরে এই টানেল নির্মাণের জন্য তিনি চীনকে অনুরোধ করলে তারা রাজি হয়ে যান।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনটি মেট্রো রেল নির্মাণেও সমীক্ষা চলছে। আগামীতে আমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেলও করে দেব।

শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে আমাদের বাণিজ্য রাজধানী। সেই হিসেবেই চট্টগ্রামকে আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আপনারা গত নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকে এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। কেননা এই নৌকা মার্কা যখনই সরকারে এসেছে, তখনই দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। আগে এই চট্টগ্রামে ছিল সন্ত্রাসের রাজত্ব। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামকে আমরা গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কাজ আওয়ামী লীগ সরকার করেছে, সে কাজ এর আগে আর কোনো সরকার করে নাই। ওই বিএনপির কাজ হচ্ছে মানুষ খুন করা, লুটপাট করা, দুর্নীতি করা। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, আর তার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। ২০০৭ সালে আর রাজনীতি করবে না বলে সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। আর কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরকারবারীতে যুক্ত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টায় সাজাপ্রাপ্ত।

তিনি বলেন, অন্যদিকে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তার সরকার নিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে গণতন্ত্রের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে।

Link copied!