বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চাওয়া ৯ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাল বিজিবি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চাওয়া ৯ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাল বিজিবি

সংগৃহীত প্রতীকি ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় নয় রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। আজ বৃহস্পতিবার ২ বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত সোমবার থেকে সীমান্তে গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে টানা তিন দিন সীমান্তের লোকজন স্বস্তিতে আছেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে নৌকায় করে নয় জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বিজিবি সতর্ক থাকায়, তাঁরা অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। সীমান্ত দিয়ে যাতে একজনও অনুপ্রবেশ করতে না পারে—এ জন্য বিজিবি সতর্ক রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এরপরও বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে, একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন মাধ্যমে এই তথ্য উঠে এসেছে। 

গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ১৮ দিনের তুমুল লড়াইয়ের পর সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে বিদ্রোহী আরকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের অধিকাংশ সীমান্তচৌকি নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে; এতে বাংলাদেশ সীমান্তে লড়াইয়ের তীব্রতা কমে আসছে। বিদ্রোহীরা মংডু শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায়ও শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

টেকনাফের পূর্ব-দক্ষিণ সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যের মংডু। এপারে সাবরাংইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন। সীমান্তের বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন দিন ধরে যুদ্ধের আঁচ লাগেনি। এর আগে তিন-চার দিন মংডু শহরের আশপাশেই ব্যাপক লড়াই হয়। ধীরে ধীরে বিদ্রোহীরা মংডু শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত গোলাগুলি ও ভারী বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে তিন রাত শান্তিতে ঘুমিয়েছি। কিন্তু যুদ্ধাবস্থা এখনো আছে।’

গত সোমবারও দিনভর থেমে থেমে টেকনাফের হ্নীলা, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা যায়।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের পাশের বলিবাজার, মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় লড়াই এখনো চলছে। বিদ্রোহীরা মংডুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এতে এপারে গোলাগুলির আওয়াজ কমে এসেছে।

বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে নাফ নদী এলাকায় টহল জোরদার করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। নিয়মিত টহলও বাড়ানো হয়েছে। স্থলভাগেও পুলিশের টহল ও চারটি বিশেষ দল কাজ করছে।

ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকায় করে নয় জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে চেষ্টা চালায়। তবে বিজিবির তাঁদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের সাগরপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী এবং অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া গোলাগুলিতে আহত হন আরও নয় জন।

Link copied!