মায়ের জন্মদিনে জন্ম, আগুনে পুড়ে মৃত্যুও হলো একই দিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৩, ২০২৪, ১২:২৮ এএম

মায়ের জন্মদিনে জন্ম, আগুনে পুড়ে মৃত্যুও হলো একই দিনে

সংগৃহীত ফাইল ছবি

রাজধানীর বেইলি রোডে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বহুতল একটি ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় আড়াই থেকে তিন বছর বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের মেঝেতে শুইয়ে রাখা শিশুটির মরদেহ তার পুতুলের সাথে দেখা গিয়েছিল শুক্রবার সকালে। সেই শিশুর পরিচয় জানা গেছে।

শিশুটির বুকের কাছে সেদিন সাঁটানো কাগজে লেখা ছিল অজ্ঞাতনামা। ঝুঁটি বাঁধা চুল আর , ধূসর রঙের পোশাকে মরদেহ দেখে মনে হচ্ছিল, একটি বাস্তব পুতুল শুয়ে আছে । তারেই পাশে পড়ে আছে বিবর্ণ এক খেলনা পুতুল। পিরে থাকা পুলুটির মত শিশুটি নিশ্চুপ। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি ভবনে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল শিশুটি। ভয়াবহ আগুন থেকে রক্ষা পায়নি এই নিষ্পাপ প্রান। আগুনে প্রাণ গেছে তার মা-বাবারও। তিনজনের মরদেহ গতকাল রাতেই শনাক্ত করেছেন শিশুটির নানা।

বেইলি রোডের ওই ভবনে আগুনের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল শিশুটির নানা মুক্তার আলম  শিশুটিকে রাত ১০টার দিকে শনাক্ত করেন। তিনি জানান, শিশুটির নাম ফাইরুজ কাশেম জামিরা। তার বয়স মাত্র তিন বছর। মায়ের নাম মেহেরুন নিসা জাহান হেলালি (২৪) এবং বাবা শাহজালাল উদ্দিন (৩৪)।

 শিশুটির খালা মুক্তারুন নিসা হেলালির সঙ্গে জানান, ফাইরুজের মা মেহেরুনের জন্মদিন ১৪ সেপ্টেম্বর। একই দিনে ফাইরুজ জন্ম নেয়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মা-মেয়ের জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়। কেউ জানত না তাঁদের মৃত্যুর দিনটিও এক হবে।

শিশুটির নানা জানায়, জামাতা শাহজালাল উদ্দিন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন। স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বাস করতেন বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায়।  তিন দিনের ছুটিতে পেয়ে  ওদের খাগড়াছড়ি বেড়াতে যেতে চেয়েছিলেন। মুঠোফোনে দীর্ঘ সময় ওদের খুঁজে না পেয়ে পরে হাসপাতালে যান।

সকাল ৭টা থেকে তাঁরা মর্গের সামনে অপেক্ষা করার পরে  তিনজনের মরদেহ নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা কক্সবাজারের উখিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে বোনের শ্বশুরবাড়িতে পূর্ব গোয়ালিয়া গ্রামে তিনজনের দাফন সম্পন্ন হয়।

বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনের ঝুঁকি ও অনুমোদন না থাকার পরও  আটটি রেস্তোরাঁ চলছিল বছরের পর বছর। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সেখানে কেউ গিয়েছিলেন শিশুসন্তানদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন স্বজনদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কারও কারও জীবন চলত ওই ভবনে থাকা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।। তবে শেষটা এমন হবে কেউ হয়ত ভাবেনি। আগুনে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।

Link copied!