সহিংসতা পরিহার করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান রওশন এরশাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২, ২০২৩, ০৯:২১ পিএম

সহিংসতা পরিহার করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান রওশন এরশাদের

রওশন এরশাদ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

তিনি বলেছেন, আমরা এখন একটি সাংবিধানিক ট্র্যাকে এসেছি যে, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সেই নির্বাচনকে অবশ্যই সুষ্ঠু হতে হবে। অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অবশই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এটা আমরা সবাই চাই। সেটা আমাদের সবার লক্ষ্য।  আশা করছি সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) রাতে একাদশ সংসদের শেষ কার্যদিবসে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সংসদকে প্রাণবন্ত অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর করতে জাতীয় পার্টি সংসদীয় দল সবসময় আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যগণ প্রতিটি অধিবেশনে যোগদান, আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, গঠনমূলক সমালোচনাসহ বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে। জনস্বার্থে বিভিন্ন দিক এই সংসদে তুলে ধরেছে।

রওশন এরশাদ বলেন, গণতন্ত্রের সূতিকাগার হলো জাতীয় সংসদ। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আইনসভা বা পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে বিরোধীদলের অস্তিত্ব অপরিহার্য। জনগণের আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়া ও প্রয়োজন-প্রত্যাশা সংসদে তুলে ধরা ও সরকারের কাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরার জন্য বিরোধীদল আবশ্যক। জনমত ও জনপ্রত্যাশা উপেক্ষা করে সরকার নিজের ইচ্ছামত পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে তার প্রতিবাদ করা বিরোধীদলের দায়িত্ব। বিরোধীদলের প্রধান কাজ শুধুমাত্র সরকারের সমালােচনা করা নয়। বিরোধীদল মূলত গঠনমূলক ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সংসদকে পরিচালনা করে থাকে বলেই বিরোধী দল সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে পারে। অতীতের যে কোনো সংসদের তুলনায় দশম ও একাদশ সংসদ অনেক কার্যকর। বর্তমান সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি শুধু বিরোধিতার জন্য সরকারের বিরোধিতা করে না, তারা সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা এবং খারাপ কাজের সমালোচনা করে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে।

‍‍`সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল সংসদে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে; জাপা সেই ভূমিকায় সফল  হয়েছে। সংসদে একটি বিল এক-দুই মিনিটে পাস হয়নি। প্রতিটি বিলেই বিরোধী দল গঠনমূলক সংশোধনী ও জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব করেছে। যার কারণে সরকার বিরোধী দলের সংশোধনী গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারকে বিরোধী দলের সঙ্গে সহমত পোষণ করতে হয়েছে।‍‍`

তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা আমদানির এলসি খুলতে পারছেন না। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোরও আমদানির সক্ষমতা কমে গেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগতভাবে ক্ষয় হচ্ছে। এর সঙ্গে মুদ্রা সরবরাহ ব্যবস্থারও সম্পর্ক আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দেয়া হয়েছে। তবে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক না করলে এটা দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।’

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিশ্বব্যাপী ঠাণ্ডালড়াই চলছে, প্রতিযোগিতার এই ধারাটা তীব্র গতিসম্পন্ন। আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক খেলায় খেলতে যাওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই। এই বড় খেলাতে অংশ না নেয়াই আমাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তা না হলে আমাদের তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

‍‍`বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দামে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন। নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এ অবস্থা প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই। ফলে সংসারের বাড়তি খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সব শ্রেণির মানুষ। মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের ব্যয় বাড়লেও আয়ের ক্ষেত্রেও যদি সামঞ্জস্য থাকত, তাহলে এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিত না। বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি। ফলে মানুষ টিকে থাকার জন্য সঞ্চয় ভেঙে অথবা ঋণ করে খাচ্ছে। কিন্তু যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, তাদের সঞ্চয়ও নেই, কেউ ধারও দেয় না। এ অবস্থায় তারা সন্তানদের পড়ালেখা, চিকিৎসা খরচ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতেও না কুলালে খাবার খরচ কমিয়ে তিন বেলার পরিবর্তে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছেন। যদিও এক্ষেত্রেও বাস্তবতা নিষ্ঠুর! কারণ সিন্ডিকেটের থাবা এখন গরিবের খাবারেও পড়েছে।‍‍`

Link copied!