‘একতরফা’ নির্বাচন করলে এবার জনগণ রুখে দেবে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩, ০২:২৫ এএম

‘একতরফা’ নির্বাচন করলে এবার জনগণ রুখে দেবে: মির্জা ফখরুল

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সরকার ‘একতরফা’ নির্বাচন করলে এবার জনগণ রুখে দেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা প্রায়ই বলে যে, বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে, বিএনপি চক্রান্ত করছে। আরে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত তো তোমরা করছো। এই দেশের মানুষের সমস্ত অধিকারগুলোকে তোমরা কেড়ে নিয়েছো, ভোট দাও না। আবার একটা ভোটের দিকে যেতে চাও যেন আগের মতোই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খোলা মাঠে টফি নিয়ে চলে যাবে।”

‘‘এদেশের মানুষ এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আর সম্ভব হবে না। এবার আর ওয়াকওভার পাবে না আওয়ামী লীগ। এবারকার মানুষ তারা রুখে দাঁড়াবে।’’

তরুন ও যুবকদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘কথা একটাই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আপনারা উঠে আসুন। প্রতিরোধ গড়ে তুলন। এই যে ভয়াবহ শক্তি যে আমার জাতিকে ধবংস করে দিচ্ছে, যে আমার ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, যে আমার রাষ্ট্রকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে চলেছে সেই ভয়াবহ সরকারকে অবশ্যই প্রতিরোধ করে দমন করতে হবে, বিজয় লাভ করতে হবে।”

‘‘আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং জীবনকে পণ করে… এটা এখন পণ করতে হবে, অঙ্গীকার করতে হবে যে জিততে আামাদের হবেই। এছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

তিনি বলেন, ‘‘আসুন আমরা সামনে দিকে এগিয়ে যাই, বিজয় অর্জন করি। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে এনে সত্যিকার অর্থে কারা মুক্তি দিবস পালন করি। আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি চরম অসুস্থতা নিয়ে গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন তাকে মুক্ত করে তাকে সুস্থ করে আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনি।”

“আমাদের হাজারো নেতা-কর্মী যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের ঋণ শোধ করি এবং যে ৬/৭শ নেতা-কর্মী গুম হয়েছে তাদের পরিবারকে সাত্বনা দেই, ৪০ লক্ষ মানুষ যারা নির্যাতত হচ্ছেন তাদের মুক্ত করি। মোট কথায় সমগ্র বাংলাদেশকে মুক্ত করি।”

‘সরকার প্রমাদ গুনছে, বিজয়ী হয়ে ফিরতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে আপনারা (নেতা-কর্মীরা) আন্দোলনকে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছেন এখন সরকার প্রমাদ গুনছে, সরকার ভয় পেয়েছে। ভয় পাওয়ার কারণে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে কিভা্বে এইসমন্ত গণতন্ত্রের সৈনিকদেরকে পর্যদুস্ত করা যায়, তাদের আটকিয়ে রাখা যায়।”

“কিছুদিন আগেও তারা(সরকার) বলেছে, বিএনপি নাই। এখন যখন বিএনপি মাটি খুঁড়ে বেরুচ্ছে। তখন তারা আবার প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে। তাই আজকে আমাদের লক্ষ্য একটাই, আমাদের আন্দোলনকে, আমাদের সংগ্রামকে বিজয় অর্জন করে আমাদের ফিরে আসতে হবে। এর আগে ফিরে আসার সুযোগ নেই।”

‘উন্নয়ন তাদের হচ্ছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে পত্রিকায় প্রকাশিত একটা খবর আমাকে তাড়িত করেছে। একজন গ্রাজুয়েট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস একজন ছেলে, সে ল’ পাস করে আইনজীবী হিসেবে জয়েন করেছে। আদালতে সে সিনিয়রের কাছ থেকে ৫শ টাকা করে পায়। তাতে তার সংসার চলে না, মা ও পরিবারকে ভরণপোষণ করতে পারে না। সেজন্য শুক্র ও শনিবার মোটর সাইকেল রাইড করে। সেখানেও সে যে আয়টা করে তাতে দুই বেলা দুইমুঠো খেতে পারে না ঠিক মতো। একটা রুটি একটা ডিম খেতে পারে না ঠিক মতো… এই হচ্ছে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, এটাই দেশের সত্যিকার চিত্র।”

“আর তারা উন্নয়ন উন্নয়ন করে, উন্নয়ন হয়েছে তাদের, তারা পকেটে টাকা ভরেছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, বাড়ি-ঘর তৈরি করেছে। সেটাকে বজায় রাখার জন্য তারা ক্ষমতায়কে অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে জোর করে দখল করে রাখতে হবে। আর কোনো কথা নয়, একটাই কথা এবার আমাদের জয়ী হতে হবে, এদের পরাজিত করতেই হবে, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ‘উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরাম’ ও ‘বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম’র যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৬তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ‘তোমার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুল রহমান খোকন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের বিলকিস ইসলাম, মহানগর দক্ষিন বিএনপির আরিফা সুলতানা রুমা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নাজমুল হাসান, ছাত্র দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

২০০৭ সালের গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১৮ মাস কারাবাসের থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তারেক রহমান।

Link copied!