সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করতে চায়: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ৩, ২০২৩, ০২:৩১ এএম

সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করতে চায়: ফখরুল

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করতে চায়’ বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে পরিবারের দেয়া আবেদন আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নাকচের প্রসঙ্গ টেনে সোমবার বিকেলে কৃষক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই সরকার, এই অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার তাকে হত্যা করতে চায়। তাকে চিকিতসার কোনো সুযোগ না দিয়ে মিথ্যা প্রতারণা করে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আজকে দেশনেত্রীকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করতে চায়।”

‘‘ যে কথাগুলো তারা(সরকার) বলছেন এই কথাগুলোর একটাই মাত্র উদ্দেশ্য .. এরা আসলে কাপুরুষ, এরা ভীত। এরা জানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, আবার জনগনের মাঝে ফিরে আসেন তাহলে দেশনেত্রীর জন্য কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে তাদের তখতে তাউস ধবংস হয়ে যাবে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদে্শে চিকিতসার জন্য তারা(সরকার) বিভিন্ন রকম আইন কানুন দেখাচ্ছে। যথন আপনার(শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিলো তখন কি আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন…যান নাই… আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেনো?”

‘‘ একটাই কারণ যে, রাজনৈতিক ভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তারা বেগম জিয়াকে সুস্থ করতে চায় না, তারা বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না।আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই যে, এদেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, এদেশে তারাই সরকার চালাবে, তারাই সরকারে থাকবে। তাদের কথা-বার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এদেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।”

গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই আবেদন আইন মন্ত্রণালয় পাঠানোর পর গতকাল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব শর্তে তিনি সরকারের  নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন, তাতে আগের আদেশ চলমান থাকা অবস্থায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব না।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে ‘শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ‘এক দফা’ দাবিতে এই কৃষক সমাবেশ হয়।

কাকরাইল থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল সহকারে এই সমাবেশে যোগ দেয়।

সমাবেশে নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘুরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।

‘পিটার হাসকে নিয়ে সরকারের ক্ষোভ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘পিটার হাসকে নিয়ে তারা(সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে তারা যার পর নাই কথাবার্তা বলছে। এমনকি তাদের বংশবদ যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আছে … মিথ্যাচার করছে। এরা এতো দায়িত্বজ্ঞানহীন দায়িত্বশীলতার অভাব যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি রপ্তানি পণ্য যায়, তাদের ওখানে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস চায় সেই দেশের সঙ্গে তারা সমস্যা তৈরি করেছে।”

‘‘আরেকটা খবর আছে, এই সেপ্টম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স মানে আমাদের বিদেশে যে শ্রমিকরা কাজ করেন তারা যে টাকা পাঠায়। গত কম অর্থ পাঠিয়েছে । তার অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নাই সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না। এরকম অবস্থা করে রেখেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নাই। একটাই পথ। সরাসরি বলতে চাই এই অবৈধ সরকারকে… এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।সত্যিকার অর্থে দেশের ভালো চান, দেশের কল্যাণ চান এই ব্যবস্থায় আসুন।’’

‘অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কিভাবে স্বৈরাচারকে কিভাবে ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয় এবং সেটাই ইনশাল্লাহ এদেশের মানুষ করবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।

‘জেগে উঠুন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘রংপুরের ভাষায় জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা অনেকদিন আগে বৃটিশ পিরিয়ডে তিনি বিদ্রোহ করেছিলেন… বিপ্লব করতে গিয়ে সমগ্র কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক।”

‘‘কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে উঠেন। এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে জেগে উঠেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে…. এই শপথ নিয়ে আসুন আমরা আগামী দিনগুলোতে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি, প্রতিরোধ গড়ে তুলি, এদের সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’’

সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি। অন্যদিকে মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়ি-ঘর করে আখের গোচ্ছাছে বলে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ।

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামে সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের নাসির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আনম খলিলুর রহমান, আসলাম মিয়া, সৈয়দ অলিউল্লাহ সিদ্দিকী, মোশাররফ হোসেন, মিজানুর রহমান লিটু, ওবায়দুল রহমান টিপু, ফজলে হুদা, শাহ আবদুল্লাহ বাকী, শাহ মো. মুনিরুর রহমান, মাহমুদা হাবিবা, দীপু হায়দার খান, ইউনুস আলী মোল্লা, সাহাদাত হোসেন বিপ্লব, আশরাফুল আরিফ ডন, কাজী হোসেন, শফিকুর রহমান মিঠু, মীর হাসান কামাল তাপস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশে থাকলেও বক্তব্য দেননি।

Link copied!