সর্বজনীন পেনশনের জন্য যেভাবে আবেদন করবেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৮, ২০২৩, ০৫:৫১ এএম

সর্বজনীন পেনশনের জন্য যেভাবে আবেদন করবেন

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু হয়েছে। আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য এতে চারটি স্কিম থাকছে।

বৃহস্পতিবার সকালে বহুল প্রতীক্ষিত এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে আজ থেকেই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হয়েছে সবার জন্য।

পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন চাঁদাদাতা। তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তাঁর নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত হতে যত বছর বাকি থাকত, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন উত্তোলন করতে পারবেন।

যেভাবে আবেদন করবেন

প্রথম ধাপ

নিবন্ধন প্রক্রিয়ার প্রথমেই ‘ইউপেনশন’ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এরপর একটি পাতা আসবে, সেখানে লেখা থাকবে, ‘প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’

তবে ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না বলে জানিয়েছে পেনশন কর্তৃপক্ষ।

এরপর ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা ও প্রগতি - এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি লিখে দিতে হবে। এরপর পাতার নিচের দিকে থাকা ক্যাপচা লিখে পরের পাতায় যেতে হবে।

উল্লেখ্য, ক্যাপচা দেয়ার পরে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই-মেইলে একটি ওটিপি বা গোপন নম্বর আসবে, যা ফরমে পূরণ করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ

নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা আসবে। সেখানে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, মাতার নাম, পিতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে (যেহেতু আগের পাতায় এ তথ্যগুলো দেয়া আছে)।

তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লেখার পাশাপাশি পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। পেশা বাছাইয়ের ঘরে বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ব্যবসা, শিক্ষক, আইনজীবী, দিনমজুর, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশার উল্লেখ রয়েছে। সেখান থেকে নিজের পেশা নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের পাতায় (‘স্কিম তথ্য’) যেতে হবে।

তৃতীয় ধাপ

স্কিম তথ্যের পাতায় মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক তিনটি অপশন রয়েছে। ধরন বাছাই শেষে ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে।

চতুর্থ ধাপ

ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম ও ব্যাংকের শাখার নাম লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে।

এ সময় নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে।

পঞ্চম ধাপ

‘সম্পূর্ণ ফরম’ নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখা যাবে। সেখানে কোনো তথ্য ভুল থাকলে আবার শুরু থেকে গিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। তবে সব তথ্য ঠিক থাকলে সম্মতি দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোডও করা যাবে।

এর আগে, রোববার (১৩ আগস্ট) সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ (২০১৩ সনের ৪ নম্বর আইন)-এর ধারা ২৯-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নতুন এ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩ নামে অভিহিত হবে।

সূত্র জানায়, এ কর্মসূচিটি এমনভাবে করা হচ্ছে, যাতে দেশের ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সি জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশ নিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকরাও স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। তবে সেই ক্ষেত্রে স্কিমে অংশ নেয়ার তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দেয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন।

আর প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা প্রযোজ্য স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। তবে এতে অংশ নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।

Link copied!