১০ সন্তানের মা হয়েও ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৫, ২০২৪, ১০:৫৯ এএম

১০ সন্তানের মা হয়েও ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়

১০ সন্তানের মা ফরিদা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

‘একটু সুখের আশা করেছিলাম সন্তানদের কাছে। সেই সুখ আর কপালে নাই!’ মনের দুঃখ উজাড় করে দিয়ে বেশষ আক্ষেপের সুরে কথাটি বলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌর পেয়ারপুর গ্রামের কলম গড়িয়ার স্ত্রী মোসাঃ ফরিদা বেগম। এক নয়, দুই নয়, দশ সন্তানের মা হয়েও ঠাঁই মিলছেন না কারো কাছে। জীবনের শেষ সময়টুকুত হয়তো স্বাচ্ছন্দের সঙ্গেই কাটানোর আশায় আশায় চার ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি ছয় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বেশ সচ্ছল পরিবারে। তবে ভাগ্যের নির্মাম পরিহাসে ৮২ বছর বয়সী সেই বৃদ্ধ ম এখন’ ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাস্তায় রাস্তায়।

ফরিদা বেগম জানান,‘স্বামীর রেখে যাওয়া ৬৭ শতাংশ ফসলি জমি বিক্রি করে সন্তানদের মানুষ করেছি। আর বাড়ির ৪৫ শতাংশ জমি বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে সন্তানেরা লিখে নিয়ে গেছে। আমাকে একটা টাকাও দেওয়া হয়নি। বড় ছেলে ও ছোট ছেলে এই ঘটনার জন্য বেশি দায়ী। আমি আমার সব সম্পত্তি ফেরত চাই। আমি বৃদ্ধ বয়সে একটু শান্তি চাই।’

তার আরও অভিযোগ, সম্প্রতি সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া মারধর করে তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বড় ছেলে দেলোয়ার তাকে বিষ খেয়ে মরে যেতে বলেছেন। ছোট ছেলে বের করে দেওয়ার পর আশ্রয় নিয়েছিলেন বড় মেয়ে সুফিয়া বেগমের বাড়িতে। সম্পত্তির ভাগ কম হওয়ায় বড় মেয়েও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাকে দেখভাল করবেন না। আর অন্য ছেলেদের মুখেও একই কথা। এরপর থেকেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তিনি।

জানা যায়, স্বামী কলম গড়িয়া মারা গেছেন ৩৫ বছর আগে। এরপর কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। মেয়েদের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী, মেজো ছেলে কামাল টিটিসিতে চাকরি করেন, সেজো ছেলে হেমায়েত পল্লী চিকিৎসক, আর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া এলজিইডিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া ছয় মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন সম্ভ্রান্ত পরিবারে।

তবে মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়া আর জোর করে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্তরা জানান, সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে এই পরিস্থিতির জন্য তাদের মা-ই দায়ী।

বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া বলেন, ‘আমি জোর করে সম্পত্তি লিখে নিইনি। মা তার ১০ ছেলেমেয়েকে সম্পত্তি স্বেচ্ছায় লিখে দিয়েছেন। মাকে আমি খাবার দিই না, এ কথা ঠিক না। মা আমার নামে যে অভিযোগ দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।’

বড় মেয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের বোনদের অল্প সম্পত্তি দিয়েছে মা। এজন্য মাকে আমরা কেউই বাড়িতে রাখব না। ছেলেদের সম্পত্তি বেশি দিয়েছে, তাদের কাছে মা থাকুক।’

আরেক ছেলে হেমায়েত গড়িয়া বলেন, ‘ছোট ভাই কাজল গড়িয়া বেশি সম্পত্তি লিখে নেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ভাই-বোন সবাইকে সম্পত্তি সমান ভাগ করে দিলে মায়ের এই অবস্থা হতো না। আমার মাকে আমি বলেছি, আমার ঘরে থাকতে ও খাবার খেতে। মা আমাকে সম্পত্তি কম দেওয়ায় সে নিজেই আমার ঘরে থাকবে না।’

ফরিদার ছোট ছেলে কাজল গড়িয়ার বলেন, ‘আমার মায়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে। তাই মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা বলে। আমি মাকে মারধর করিনি, আর জোর করে সম্পত্তি লিখেও নিইনি। মা আমার নামে মিথ্যে কথা বলছে। আমার মা, ভাইদের একই সম্পত্তি বারবার লিখে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে, ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর তিলে তিলে ছেলেমেয়েদের বড় করে এখন বৃদ্ধ বয়সে তার ঠাঁই হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। ফরিদা বেগমকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন। আইনি সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতাও দেওয়া হবে। জোর করে সম্পত্তি লিখে নিলে সেটা ফেরত আনার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Link copied!