গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট ২০২৩

ভারত, ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা যেতে পারে : নৌপ্রতিমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ০১:১৭ এএম

ভারত, ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা যেতে পারে : নৌপ্রতিমন্ত্রী

প্রতিমন্ত্রী বুধবার (১৮ অক্টোবর) মুম্বাইতে গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট ২০২৩ এর দ্বিতীয় দিনে ‘ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ এন্ড কোস্টাল শিপিং: দি ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেশনে অংশ নেন।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, অভ্যন্তরীণ নৌপথ সংযোগ ও উন্নয়ন, সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থায় জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, সমগ্র অঞ্চল জুড়ে সংযোগের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ ধরণের সামিট কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের তিন দিকে ভারতের সাথে সীমান্ত রয়েছে, যার বিস্তৃতি ৪,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি। একদিকে মিয়ানমার। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত, ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধার জন্য আরও কাজে লাগানো যেতে পারে। অর্থনৈতিক সম্প্রীতি, সংযোগ এবং বাণিজ্যের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম।

প্রতিমন্ত্রী বুধবার (১৮ অক্টোবর)  মুম্বাইতে গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট ২০২৩ এর দ্বিতীয় দিনে ‘ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ এন্ড কোস্টাল শিপিং:  দি ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেশনে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী এর আগে গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট ২০২৩ এর মিনিস্ট্রারিয়াল বৈঠকে অংশ নেন।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ভারতের সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি দৃষ্টান্ত পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নীতি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নের এক নতুন দিগন্তে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়া যা আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করে। সম্প্রতি, আমরা রুপির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেছি। ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যসহ ভারত, বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আমরা ভারত থেকে বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করি। পাট, তুলা, পেঁয়াজ, শাকসবজি, মাছ, জামাকাপড় থেকে শুরু করে আমাদের মধ্যে ব্যবসার জন্য শিল্প পণ্য, যন্ত্রপাতি, সার, আকরিক, খনিজ এবং কাঁচামালের আধিক্য রয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এত বড় আয়তনের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুবিধার্থে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত এক দশকে অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা অনেক নতুন সীমান্ত হাট, শুল্ক স্টেশন, সড়ক ও রেল সংযোগ, ব্যবসাকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য সেতু নির্মাণ করেছি। বাংলাদেশ ভুটানের সাথে একটি পিটিএ (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেডিং এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর করেছে এবং অন্যান্য প্রতিবেশীদের সাথেও এটি করতে আগ্রহী। আমরা বর্তমানে ভারতের সাথে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি বাংলাদেশের এলডিসি অবস্থা থেকে উত্তরণের পর বর্ধিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করবে। সরকার সারাদেশে নৌ চলাচলের উপযোগী নৌপথ ১০,০০০ কিলোমিটারে উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়েছে। ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ জলপথ এবং অভ্যন্তরীণ সংযোগের ব্যবহার ও উন্নয়নের উপরও জোর দিচ্ছে।  সংযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশ মৈত্রী (বন্ধুত্ব) এক্সপ্রেস চালু করেছে এবং বেশ কয়েকটি পুরানো রেল নেটওয়ার্ক পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উভয় নেতাই ভারতের চিলাহাটি এবং বাংলাদেশের হলদিবাড়িকে সংযোগকারী আন্তঃসীমান্ত রেলপথ পুনরুজ্জীবিত করতে সম্মত হন। এ বছর আরও অনেক রেলপথ চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কার্যক্রমে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। পলি পড়া আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। আগে প্রধান নদী ও উপনদীগুলোকে মৌসুমী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের উপযোগী রাখা হতো। কিন্তু বর্তমানে নদীগুলো মৌসুমে বেশি পলি বহন করছে। অববাহিকাগুলো দ্রুত প্রশস্থ হওয়ার ফলে একদিকে ক্ষয় হচ্ছে এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার একই সাথে জমির ক্ষতি রোধ এবং নিরাপদ নাব্যতা নিশ্চিত করার জন্য অবিরাম ড্রেজিং কার্যক্রমের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণ করছে। সরকার ১০,০০০ কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি বিশাল ড্রেজিং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।  পলি, ক্ষয়, বন্যার তথ্য শেয়ার করতে পারি এবং একসাথে টেকসই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পারি। স্থানীয় জনগণের সুবিধার জন্য সরকারি প্রকল্পগুলিকে একটি আঞ্চলিক নকশায় একীভূত করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ভারতের মুম্বাইতে গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন। ভারতের পোর্ট, শিপিং ও ওয়াটারওয়েজ এবং আয়ুষ বিষয়ক মন্ত্রী উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রতিমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। বিআইডব্লিউটিএ‍‍`র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা উক্ত সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

মেরিটাইম সেক্টরের বিভিন্ন দিকের উপর গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি এ সেক্টরের উত্তম চর্চার প্রসার, বৈশ্বিক মেরিটাইম শিল্প, নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য অংশীজনের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করা  সম্মেলনের মূল উদ্দশ্য। টেকসই মেরিটাইম খাত, গবেষণা ও উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি, পর্যটন, মেরিটাইম ক্লাস্টার্স, দেশীয় জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত, অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় শিপিং, নৌ-নিরাপত্তা, পেশাগত মেরিটাইম সেবাসহ উক্ত খাতে অর্থায়ন, বীমা, সালিশী প্রভৃতি এ সম্মেলনে অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু। সম্মেলনে অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশ-ভারতের মেরিটাইম সেক্টরে সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। মেরিটাইম সেক্টরের পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময় এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে দু‍‍`দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা এবং অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করার জন্য এই সম্মেলন সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

ভারতের রোড ট্রান্সপোর্ট এন্ড হাইওয়েজ মন্ত্রী নিতিন গাদকারির সভাপতিত্বে  এবং ভারতের ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতের  আর্থ সায়েন্স মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, ভারতের পোর্ট, শিপিং ও ওয়াটারওয়েজ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আর লক্ষামানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা প্রমুখ।

Link copied!