রাশিয়ার ‘বন্ধু’ বাংলাদেশ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৬:০২ এএম

রাশিয়ার ‘বন্ধু’ বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি

রাশিয়ার সরকারের প্রকাশিত ‘বন্ধু ও নিরপেক্ষ’ দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশের। এখন থেকে রাশিয়ান মুদ্রা বাজারের পাশাপাশি ডেরিভেটিভস বাজারে বাণিজ্যের অনুমতি পাবে বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশ।

শনিবার বাংলাদেশে রাশিয়ার দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

পোস্টটিতে বলা হয়, ৩০টিরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিরপেক্ষ দেশ, ব্যাংক ও ব্রোকারদের একটি তালিকা অনুমোদন করেছে রাশিয়ান সরকার। এদের রাশিয়ান মুদ্রা বাজারের পাশাপাশি ডেরিভেটিভস বাজারে বাণিজ্য করার অনুমতি দেওয়া হবে।

তালিকায় রয়েছে- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, বাহরাইন, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাতার, চীন, কিউবা, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মঙ্গোলিয়া, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

এর আগে খসড়া তালিকা থেকে পাঁচটি দেশ ও অঞ্চলকে বাদ দিয়েছে রাশিয়া। এসব হলো- আর্জেন্টিনা, হংকং, ইসরায়েল, মেক্সিকো ও মলদোভা।

ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ শুরু করার পর মস্কোর ওপর যেসব দেশের নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তাদের রাশিয়া ‘অবন্ধু’ তালিকায় ফেলেছে। যাদের স্থান ‘বন্ধু ও নিরপেক্ষ’ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মধ্য এশিয়ার দেশ- যে দেশগুলো একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। এ ছাড়া অনেক দেশ দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার মিত্রদেশ হিসেবে পরিচিত।

দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ঢাকায় আসলে বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের পরিস্থিতি যে ইতিবাচক সেটি ধারণা করা যায়। কেন না এটিই ছিল রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। সে সময় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখেও বাংলাদেশ তার স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি অটুট রেখেছে।’

দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের পর বাংলাদেশ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি বছরে দুই দেশের বাণিজ্য ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। আর ২০২২ সালে এ বাণিজ্য ৩০০ কোটিতে পৌঁছেছে। এ বছর দুই দেশের বাণিজ্য কমেছে। এ নিয়ে দুই দেশের আন্তদেশীয় কমিশন কাজ করছে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন রুবল ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশটি সুদের হার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এদিকে দেশটির মস্কো এক্সচেঞ্জ হাউসে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রা দিরহাম ও রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের লেনদেন চালু হচ্ছে। তবে এসব লেনদেন নিষ্পত্তি হবে রুবলে।

বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে লেনদেনের ৯০ শতাংশের বেশি মার্কিন ডলারে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইউরো, পাউন্ড, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও কানাডিয়ান ডলারে কিছু লেনদেন হয়ে থাকে। এর বাইরে ভারতের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা-রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রুপিতে রপ্তানি আয় থাকলেই কেবল রুপিতে আমদানি করা যাচ্ছে।

চলতি বছর বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়া এবং এর দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে রাশিয়ার তেল রাজস্ব কমেছে। তবে গত বছর দেশটির আমদানি কমে যাওয়ার কারণে বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২১ বিলিয়ন বা ২২ হাজার ১০০ কোটি ডলারে। এ ছাড়া গত জুন মাসে পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণে দেশটির অনেক মানুষ বিদেশি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করেছেন—এসব কারণে রুবলের দরপতন হচ্ছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে।

বাজেট-ঘাটতি ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি কমে যাওয়ায় রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভারসাম্য অনেকটাই বিনষ্ট হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস, চলতি বছর মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে; এতে বোঝা যায়, চ্যালেঞ্জ ঠিক কতটা। তবে জুলাই মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান বলছে, মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে।

Link copied!