বিশ্বনেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

ড. ইউনূসের ব্যাপারে বিবৃতি না দিয়ে এক্সপার্ট পাঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগস্ট ২৯, ২০২৩, ১১:২৪ পিএম

ড. ইউনূসের ব্যাপারে বিবৃতি না দিয়ে এক্সপার্ট পাঠান

সংগৃহীত ছবি

ড. মুহম্মদ ইউনূসের মামলার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি-বিবৃতি না দিয়ে বিশ্বনেতাদের এক্সপার্ট পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি বলেও  তিনি জানান।

মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূসের বিচার প্রসঙ্গে করা সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ড. ইউনূসের ব্যাপারে বিবৃতি না দিয়ে এক্সপার্ট পাঠান। আমাদের এখানে ল এন্ড অর্ডার আছে। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে কেউ যদি শ্রমিকের টাকা না দেয়, আর মামলা হয় আমাদের কি করার আছে। জুডিশিয়ারি তো স্বাধীন। এই মামলা যাতে না হয় তার জন্য ঘুষ দেয়া হয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “তার (ইউনূস) বিরুদ্ধে টেলিকম শ্রমিকরা মামলা করেছে, বিচার বিভাগ স্বাধীন, এখানে আমার করার কিছু নাই, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের বলবো আপনারা এসে দেখুন কিভাবে বিচার হচ্ছে, যাচাই করে দেখুন।

বিবৃতিদাতাদের উদ্দেশ্যে করে শেখ হাসিনা বলেন, বিবৃতি না দিয়ে তাদের ক্লায়েন্টের জন্য অভিজ্ঞ লোক পাঠাক। এটা আসলে কী? কাগজপত্র ঘেঁটে দেখুক তারা। আমরা তো মামলা করিনি। এনবিআর থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লেবাররা মামলা করেছেন।

ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, “প্রথমবারে গিয়ে ব্রিকসে সদস্য পদ পাবো এমন চিন্তা ছিলো না। ধাপে ধাপে অন্য দেশগুলোকে সদস্য করা হবে। ভৌগলিকভাবেই আরও নতুন সদস্য করা হবে। আমার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে।”

এসময় তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হলো, তিনি আমাকে যখন আমন্ত্রণ জানালেন, সে সময় আমাকে জানালেন যে তারা কিছু সদস্য বাড়াবেনও। তখন তিনি আমার মতামত জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম যে, এটা খুবই ভালো হবে। কারণ ব্রিকস যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন থেকে এই পাঁচটা দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে কিন্তু সবসময় আমার ভালো যোগাযোগ ছিল এবং এখনও আছে। আমরা যখন জানলাম যে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হচ্ছে, ওটার ওপরেই আমাদের আগ্রহটা বেশি ছিল। সেখানে আমরা যুক্ত হতে চেয়েছিলাম। যখন এটা তৈরি হয় তখন থেকেই আমাদের আগ্রহ ছিল যে এটার সঙ্গে আমরা যুক্ত হবো।

সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “ঢাকা থেকে এখন বরিশাল মাত্র ৩ ঘণ্টায় যাওয়া যায়। পায়রা বন্দর পর্যন্ত যেতে বড়জোর ৫-৬ ঘণ্টা লাগে। আগে যেখানে লঞ্চে ২৪ ঘণ্টাই লাগতো। ‌‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তো এটাই। ওই অঞ্চলটা একেবারে অবহেলিত ছিল। এখন বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনাসহ ওই পুরো এলাকা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেখানকার প্রত্যেকটা গ্রামই এখন শহরের মতো। গ্রাম এখন আর গ্রাম নাই। গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষ এখন সব নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ছিলো ভিক্ষা চাওয়ার দেশ। এখন আর এই দেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়। তিনি বলেন, এখন আর গ্রাম নেই। গ্রামেই সব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে এখন ব্যবসা করছে।

প্রসঙ্গত, ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২২ আগস্ট রাতে জোহানেসবার্গে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলনে যোগ দেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

পরে তিনি আফ্রিকান দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের আয়োজিত ‘বাংলাদেশ দূত সম্মেলনে’ যোগ দেন। বিকালে তিনি হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘রাষ্ট্রীয় ভোজ’-এ যোগ দেন।

২৪ আগস্ট তিনি ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’-ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ)- এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ দেন।

ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে শেখ হাসিনা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডক্টর সাইমা সুল্লুুহু এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের মধ্যেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্মেলন শেষে গত ২৭ আগস্ট সকাল ৮টা ৩১ মিনিটে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

Link copied!