ভূমিকম্প হলে করণীয় কি? কেন ঢাকার এত কাছে ভূমিকম্প হলো?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৫, ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম

ভূমিকম্প হলে করণীয় কি? কেন ঢাকার এত কাছে ভূমিকম্প হলো?
বাংলাদেশ সময় আজ ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এর উৎপত্তিস্থল ঢাকার দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল। কি কারণে ঢাকার এত কাছে ভূমিকম্প হয়েছে?
এ বিষয়ে ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকার আশপাশে কিছু ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি বা ফাটল আছে। ছোট ও সরু নদী বা খাল এসব চ্যুতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এমন একটি চ্যুতি থেকেই আজ শুক্রবার সকালে ভূমিকম্প হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
বিশেষ করে, দোহার ও এর আশপাশের এলাকায় কয়েকটি ছোট নদী আছে। সেখানে চ্যুতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত কিছু নদী আছে। এমন চ্যুতিগুলো দিয়ে ছোট ভূমিকম্প হতে পারে। ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায় এ ধরনের ভূমিকম্পের প্রক্রিয়াকে ‘নিওটেকটনিক’ বলা হয়।
বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষকের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা সব কটি এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে, এমন মত বিশেষজ্ঞদের। আবহাওয়াবিদদের কথা, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া খুব জটিল বিষয়। কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকম্পকে সরাসরি নির্ণয় করা যায় না। ভূমিকম্পবিষয়ক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সরকারের সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
আবার ব্যক্তিপর্যায়েও ভূমিকম্পের সময় কিছু করণীয় আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পের সময় করণীয় নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এটি দেওয়া আছে।
নিচে করণীয়গুলো তুলে ধরা হলো:
  • ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না।
  • ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।
  • রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।
  • বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
  • ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন।
  • গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।
  • ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে।
  • একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।
  • ওপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা থেকে বিরত থাকুন।
  • কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।
  • গাড়িতে থাকলে পদচারী–সেতু, উড়ালসড়ক, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরে থাকুন।
  • ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখুন।
  • বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করুন।
Link copied!