জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ০১:০১ পিএম
নিউ ইয়র্ক থেকে মুম্বাইগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে পাশের সিটে বসা এক বৃদ্ধা নারীর গায়ে প্রস্রাব করার অভিযোগে অভিযুক্ত সেই যুবক এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। তার খোঁজ পেতে লুকআউট নোটিস জারি করার আরজি জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। অথচ ওই যাত্রী যে সংস্থায় চাকরি করেন, তারা দ্রুত কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। মার্কিন (বহুজাতিক সংস্থা ওই কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে।
আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এক আর্থিক পরিষেবা সংস্থার বেশ উচ্চপদে চাকরি করেন অভিযুক্ত যাত্রী শংকর মিশ্র। তিনি ওয়েলস ফারগো নামে এক মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার ভারতীয় শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট। ঘটনাটি জানার পরেই তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে মার্কিন সংস্থাটি।
বিবৃতি দিয়ে সংস্থাটি জানিয়েছে, “ওয়েলস ফারগো নিজেদের কর্মীদের কাজ এবং আচরণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই কর্মীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে, তা সংস্থার পক্ষে অত্যন্ত বিরক্তিকর। তাই তাঁকে বরখাস্ত করা হল।”
অনেকে বলছেন, সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাবের মতো জঘন্য কাজের মাশুল দিতে হল চাকরি খুইয়ে। এবার যদি শিক্ষা হয়! তবে অভিযুক্ত ওই যুবকের বাবা কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ছেলের পাশেই দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে, ছেলে এই কাজ করেনি।
প্রসঙ্গত, মদ পান করে প্লেনে ওঠেছিলেন ভারতীয় ওই যুবক। প্লেনে বসার পর শুরু হয় তার মাতলামি। মাতলামির এক পর্যায়ে পাশের সিটে বসা বৃদ্ধা নারীর ওপর প্রস্রাব করে দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ছেড়ে আসা দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে। তবে এনিয়ে কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি ওই যুবককে। বরং কোনো বাধা ছাড়াই দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে বের হয়ে যান ওই যুবক।
এনডিটিভি‘র প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বরের ঘটনা ছিল এটি। ওইদিন নিউইয়র্ক থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি প্লেন যখন মাঝপথে ছিল তখন বিজনেস ক্লাসের ভেতর মাতালামি শুরু করেন এক যুবক। এক পর্যায়ে প্যান্টের চেইন খুলে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা সহযাত্রীর ওপর প্রস্রাব করে দেন তিনি।
এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিমানে দুপুরের খাবারের পর উজ্জ্বল বাতিগুলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কী হচ্ছিল তা পাশের যাত্রীরা বুঝতে পারছিলেন না। অভিযুক্ত যুবক এতটাই মাতাল ছিলেন যে প্রস্রাব করার পরও তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে তাকে আরেকজন এসে সরিয়ে দেন।
এমন ঘটনার পরও তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এয়ার ইন্ডিয়া ও এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েক সপ্তাহ পর এ নিয়ে টনক নড়েছে তাদের। অভিযুক্ত ওই মাতাল যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
মূলত এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালনাকারী সংস্থা টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখড়ের কাছে বৃদ্ধা চিঠি লিখে অভিযোগ জানানোর পর এ ঘটনাটি আমলে নেওয়া হয়।
ওই নারী চিঠিতে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন, যুবকের মাতলামি এবং অপ্রীতিকর কাণ্ডের পর সেটি কেবিন ক্রুদের অবহিত করেছিলেন। তাদের তিনি জানিয়েছিলেন, তার কাপড় এবং জুতা প্রস্রাবে ভিজে গেছে। ক্রুরা তাকে অন্য কাপড় ও জুতা দিয়ে সিটে গিয়ে বসতে বলেন। কিন্তু তার সিটটিও প্রসাবে ভিজে গিয়েছিল।
চিঠিতে বৃদ্ধা আরও জানিয়েছেন, তিনি ওই ভেজা সিটে বসতে চাননি। তাই তাকে ক্রুদের একটি সিটে বসতে দেওয়া হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা পর একজন ক্রু তাকে আবারও সেখানে ফিরে যেতে বলেন। সিটটি যদিও শিট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখনো সেটি থেকে প্রস্রাবের বাজে গন্ধ আসছিল। এরপর অপর একজন ক্রু সেখানে জিবানুনাশক ছিটিয়ে দেন। কিন্তু তবুও যখন ওই সিটে বসতে অস্বীকৃতি জানান তখন আরেকজন ক্রুর সিটে বসানো হয়। সেখানে ভ্রমণের বাকি তিন ঘণ্টা কাটান। ওই নারী চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, বিজনেস ক্লাসে আরও সিট থাকলেও তাকে সেখানে বসতে দেওয়া হয়নি।