যানজটে পূর্ণ এই শহরে বন্দি আপনার মাথাটাও যখন জ্যাম ধরে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। থাকছে হোম অফিস। লকডাউন ছাড়লে ফিরতে হবে আবার রোজকার জীবনে। হাফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নেবার সময়টুকু নেই। আবার করোনায় সংক্রমণ ঠেকাতে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়াও মানা। তখন সপ্তাহের একটি দিন অন্তত্য পরিবার, বন্ধু অথবা নিজের সঙ্গে নিজেই সময় কাটিয়ে আসতে পারেন ক্লে-স্টেশনে। ঠিক হারিয়ে যাওয়া শৈশবের মত মাটির সাথে।
ছেলেবেলায় মাটি দিয়ে পুতুল, হাতি, ঘোড়া নানান রকম মৃৎশিল্প বানিয়ে আনন্দ মনে সমস্ত ভুলে খেলা করেননি এমন মানুষ মেলা দায়। স্মৃতিচারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে কখনো কাঁদা মাটি দিয়ে তৈরি খেলনার কথা। কখনো সে কাঁদা মাটি বহু যত্নে রোদে শুকিয়ে রং করার কথা। সকলের শৈশবকে আরেকবার ফিরিয়ে দিতে তাই রাজধানীর ভাটারায় গড়ে উঠেছে ক্লে-স্টেশন।
মাটি নিয়েই তাদের কাজ। এখানে এসে যে কেউ পারবেন মাটি নিয়ে খেলতে, ইচ্ছেমত রং করতে আবার খেলা শেষে বাড়িও নিয়ে যেতে। এখানে রয়েছে তিন ধরনের ব্যবস্থা। কেউ চাইলে মাটির সরা তৈরির চাকা ঘুরিয়ে নিজের হাতে টব, গ্লাস, ফুলদানি বানাতে পারে।
দ্বিতীয়ত, মাটি নিয়ে খেলা করতে পারে, নিজের যা খুশি তাই তৈরিও করতে পারে। তৃতীয়, তারা আগে থেকেই কিছু জিনিস। যেমনঃ নানান ধরনের খেলনা বা পট সহ কিছু আইটেম প্রস্তুত করে রাখেন, সেগুলোকে নিজ হাতেই রং করে বাড়িও নিয়ে আসা যায়। এগুলোকে বলা হয় পিক এন্ড পেইন্ট। সেক্ষেত্রে প্রতি একঘন্টার সেশন অনুযায়ী টাকার চার্জ করা হয়।
ক্লে স্টেশনের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা শারমিন আহমেদ বিজনেস স্ট্যাডিজের শিক্ষার্থী ছিলেন। গ্রাজুয়েট হওয়ার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৮ বছর চাকুরি করেন। পরে তরুণদের সৃজনশীলতা বিকাশ ঘটানোর জন্য ২০১৬ সালে তারা ক্লে স্টেশনের উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের তরুনরা চারপাশের নেগেটিভিটি ভুলে একটু সুন্দর সময় কাটাক, ভাল কিছু দেখুক।যদিও করোনার উর্ধমুখি সংক্রমণ বাড়ার সাথে লোকের আনাগোনাও কমে গেছে। তাদের বেশির ভাগ কার্যক্রম চলছে অনলাইনের মাধ্যমে।’
ক্লে-স্টেশনে রয়েছেন ৬জন সিরামিক শিল্পী। তারা নিজেদের তৈরি কাজগুলো তৈরি করার পাশাপাশি, কিভাবে সেগুলো বানাতে হয় তাও শেখান। আর আপনি যদি সত্যিই জব্দ করে নিতে চান এ শিল্প, তবে রেজিস্ট্রেশন করে অংশগ্রহণ করতে পারেন তাদের আয়োজিত নানা ওয়ার্কশপে।
মানুষয়ের শৈল্পিকমননকে যেন আরও একধাপ এগিয়ে দেয় এই স্থান। এখানকার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব, এটি পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য একটি উপযোগী স্থান। তরুনদের উদ্দেশ্য করে ক্লে স্টেশনের শুরুটা হলেও পাঁচ কিংবা পঁয়ষট্টি সকল বয়সী মানুষ নিজের পরিবারের সাথে এখানে যান। শৈশবের মতো সব কিছু ভুলে কাটাতে পারেন নিজের মত একটি দিন।